
ডেস্কও ওয়েব ডেস্কঃ কোনও রাজনৈতিক পরামর্শদাতা নন, কোনও ম্যানেজমেন্ট গুরুও নন, শেষ পর্যন্ত ত্রিপুরায় আগামী অন্তত সাড়ে তিন দশক বিজেপি সরকার টিঁকিয়ে রাখতে ভরসা গেরুয়াধারী, কর্মযোগী সন্ন্যাসী!
আমেরিকার শিকাগোতে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে ভারতীয় সনাতন ধর্মের আদর্শ তুলে ধরে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। তাই আগরতলাতেও সরকার দীর্ঘস্থায়ী করতে বিপ্লব দেবের ভরসা বিবেকানন্দ।
বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যমন্ত্রী গদি পেয়েছেন মাত্র আড়াই বছর হল। কিন্তু স্বপ্ন দেখছেন অন্তত সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় টিঁকে থাকার। ভরসা বিবেকানন্দতে!
ত্রিপুরায় বাম জমানার ২৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে তাঁর সরকার এসেছে ২০১৮ সালে ৩ মার্চ। কিন্তু বিপ্লব দূরদর্শী। তাই ৩৫ বছর বিজেপি সরকার কী ভাবে টিকিয়ে রাখা যায় তার উপায় বাতলে দিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার আগরতলায় বিজেপির প্রদেশ দফতরে মহিলা মোর্চার রাজ্য কমিটির বৈঠকে বক্তৃতা দেন বিপ্লববাবু। সেখানেই তিনি মহিলা মোর্চার কর্মীদের দায়িত্ব দেন, ত্রিপুরার ঘরে ঘরে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি পৌঁছে দিতে।
বিপ্লব দেব বলেন, “আমি ছোট বেলায় দেখতাম ত্রিপুরার প্রায় সব বাড়িতে জ্যোতি বসু, স্তালিন, মাও সে তুংয়ের ছবি লাগানো। আমরা যেখানে ইষ্ট দেবতার ছবি লাগাই সেখানে এদের ছবি লাগত! আড়াই বছরে কটা বাড়িতে আমরা বিবেকানন্দের ছবি লাগাতে পেরেছি? এই দায়িত্ব মহিলা মোর্চার কর্মীরা নিতে পারেন না?”
তিনি বলেন, “ত্রিপুরার ৮০ শতাংশ বাড়িতে যদি স্বামী বিবেকানন্দের ছবি লাগানো যায় তাহলে এই সরকার ৩০-৩৫ বছর থাকবে।” তাঁর কথায়, ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
এর আগে তিনি করোনা রোগীদের মনের জোর বাড়াতে সব কোভিড কেয়ার সেন্টারে কোভিড রোগীদের মধ্যে বিবেকানন্দের বই বিলির ব্যবস্থা করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বিপ্লব দেবের বিভিন্ন বৈপ্লবিক মন্তব্য বারেবারে দলকে অস্তস্তিতে ফেলেছে। হাসির খোরাক হয়েছেন তিনি। এবার বিবেকানন্দের ছবি লাগিয়েই ৩০-৩৫ বছর সরকার টিকিয়ে রাখার কথা বলে ফের মানুখকে খেপালেন বিপ্লব।
ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “তিন বছর হওয়ার আগেই এই সরকারের হাত থেকে পরিত্রাণ চাইছে সাধারণ মানুষ আবার ৩০ বছর!”
তাঁর সেই ভাষণ নিজের ফেসবুক পেজেও আজ সকালে শেয়ার করেছেন তিনি। বিবেকানন্দকে নিয়ে রাজনীতি করায় মানুষ বেজায় চটেছে। ফেসবুকে তাঁর পোস্টের তলায় একের পর এক নিন্দা ও বিদ্রূপের উক্তি জমা হচ্ছে।
অনেকেই বলছেন, খবরদার বিবেকানন্দকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। বিবেকানন্দের বাণী আমরা সকলেই জানি, কিন্তি আপনার বাণী থেকে ত্রিপুরা দ্রুত মুক্তি চায়!
মনির হুসেন প্রশ্ন তোলেন, স্বামীজি কি বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি ছিলেন কোনও এক সময়ে?
পি কে আচার্যের আক্ষেপ, স্বামী বিবেকানন্দের ফটোর সাথে সরকার স্থাপনের মিল কোথায়? ধুর, এর লাইগা নি ভোট দিসিলাম আমি, যা খুশি তাই কইতাসেন!
তুষ্ণীণ রায় মুখ্যমন্ত্রীকে চমৎকার ব্যবসার পরিকল্পন দেওয়া ধন্যবাদ দেন। ব্যঙ্গ করে লেখেন, আমি জানি আপনার কথা ত্রিপুরার মানুষ ফেলতে পারবে না। আমি কাল থেকেই স্বামীজির ছবি বিক্রি করব। প্রথম ১৫ হাজার পিস অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। পারলে কিছু লোনের ব্যবস্থা করে দিন। সঙ্গে ছোট্ট করে আপনারও একটা ফটো দেব। তা হলে পার পিস হাজার টাকায় বেচতে পারব। ওহো, শেষে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, জয় শ্রী রাম!
পার্থ প্রতিম লেখেন, ফালতু কথা বাঙালিরা খায় না আর খাবেও না। স্বামীজি বিজেপির নেতা ছিলেন না। ভালো কাজ করলে সরকারে থাকবেন আর কাজ না করতে পারলে জনগণ ছুড়ে ফেলে দেবে সরকার থেকে। এটা গণতন্ত্র।
দিগন্ত নাথের উক্তি- আমার খুব ইচ্ছে ছিল বাড়িতে বিবেকানন্দের ফটো লাগানোর। কিন্তু আপনার এই কথার পরে আর লাগাবো না ভাবছি।

0 মন্তব্যসমূহ