
ডেস্কও ওয়েব ডেস্কঃ রাজ্যে ক্রমশ করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে মৃত্যুর
সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় রাজ্য সরকার বেশকিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করেছে। জেলায় জেলায় খোলা হয়েছে কোভিড কেয়ার সেন্টার। জিবি হাসপাতালকে কোভিড ট্রিটমেন্ট
সেন্টার হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীদের চিকিৎসা করা হয়।
জিবি হাসপাতালের কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে একাধিক উন্নত ব্যবস্থাপনার সংযোজন করা হয়েছে।
যাতে করে করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীরা সঠিক ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারে। কিন্তু
কোন এক অজ্ঞাত কারনে রাজ্য সরকারের সকল উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে।
সরকারী কোষাগারের
অর্থ ব্যয় করে কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে সকল ধরনের ব্যবস্থা করা হলেও প্রায় প্রতিদিন
করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটছে কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে। কখন চিকিৎসকের গাফিলতি
আবার কখন অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। এতেই শেষ নয় তিন দিনের
শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। জিবি কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত
জটিল রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসতেই ভয় পাচ্ছে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে। সরকার তো ব্যবস্থাপনার
কোন খামতি রাখছে না। তাহলে গাফিলতি কাদের। তাহলে কি একাংশ সরকারের নাম কালিমালিপ্ত
করার চেষ্টা করছে? বিষয়টি যদিও তদন্ত সাপেক্ষ। তবে একের পর এক অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী
নিজেও খুশি নন। কারন মুখ্যমন্ত্রী নিজে চাইছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে যেন কারো মৃত্যু
না হয়। সকলে যেন সঠিক ভাবে পরিষেবা পায়। তাই একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার
মুখ্যমন্ত্রী জিবি কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে যান। জিবি কোভিড
ট্রিটমেন্ট সেন্টারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সবকিছু সরজমিনে ঘুরে দেখেন। জিবি কোভিড ট্রিটমেন্ট
সেন্টারের ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখার পর মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এক প্রকার অবাক হয়ে যান। কারন
একাধিক অব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রীর চোখে ধরা পরে। পরবর্তী সময় মুখ্যমন্ত্রী জিবি কোভিড
ট্রিটমেন্ট সেন্টারের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেই
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক অব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী
সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে
জলের সমস্যা হচ্ছে। এইদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দেন জিবি কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে
পানীয় জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখার। কোভিড ট্রিটমেন্ট
সেন্টারকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
জিবি হাসপাতালের
একাংশ চিকিৎসক সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। সেই বিষয়েও অবগত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এইদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন জনতা শেষ কথা। দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছে
না, এমন কিছু চিকিৎসকের নামের তালিকা এইদিন মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালের এমএস-কে প্রদান
করেন। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন যারা জিবি কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে কাজ করতে অনিহা
প্রকাশ করেছে, তাদের জায়গায় যেন অন্য চিকিৎসক প্রদান করা হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব
কুমার দেব সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান জিবি হাঁসপাতাল রাজ্যের মূল হাঁসপাতাল।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীদের জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর
করা হয়। সম্প্রতি আগরতলা পুর নিগম এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে
জিবি হাসপাতালের উপর চাপ বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সবকিছু যেন সঠিক ভাবে করা যায়,
তার জন্য এইদিনের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সকল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
আগামি দিন গুলিতে
জিবি হাসপাতালে আর কোন সমস্যা হবে না বলেও আশাব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। এইদিনের বৈঠকে
চিকিৎসকরা বেশকিছু নতুন নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। সেই গুলি বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে
দেখা হবে। অযথা বাজারে মানুষ যেন ভিড় না জমান তার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি এ সিম্টমেটিক করোনা আক্রান্তদের জিবি হাসপাতালে ভিড় না জমিয়ে হাপানিয়া ও ভগৎ সিং
কোভিড কেয়ার সেন্টার থেকে চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণের আহ্বান জানান। এইদিনের বৈঠকে একাধিক
বিষয় সামনে উঠে আসে। ডোম নিয়ে সমস্যার কথাও উঠে আসে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন সমস্যা
দ্রুত সমাধানের। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সান্মানিক অর্থ নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যা
দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। যে সকল বিভাগে অতিরিক্ত নার্স রয়েছে তাদেরকে
চিহ্নিত করে কোভিড ট্রিটমেন্ট সেন্টারে কাজে লাগানোর নির্দেশ দেন। কোভিড ট্রিটমেন্ট
সেন্টারে রোগীদের সেবা করার জন্য স্বেচ্ছা সেবক নিয়োগের বিষয়টিও এইদিন সামনে আসে। মুখ্যমন্ত্রী
নির্দেশ দেন আগে যারা জিবি হাসপাতালে রোগীদের সেবা করতো তাদের চিহ্নিত করে কাজে লাগানোর
জন্য। সরকার থেকে তাদের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা হবে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনে চিকিৎসক
ও নার্স সাময়িক কালের জন্য নিয়োগেরও নির্দেশ দেন। যারা এই সময়ে সরকারের পাশে থেকে কাজ
করবে, তাদের শংসাপত্র প্রদান করা হবে। আগামীতে সরকারী চাকুরির ইন্টার্ভিউর ক্ষেত্রে
তাদের অগ্রাধিকার প্রদানের বিষয়েও সরকার চিন্তা ভাবনা করবে। সব মিলিয়ে এইদিন প্রত্যেকটি
বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী খোলাখুলি আলোচনা করেন। এইদিন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন স্বাস্থ্য
সচিব এস.কে রাকেশ সহ অন্যান্যরা।

0 মন্তব্যসমূহ