
ডেস্কও ওয়েব ডেস্কঃ অমিত শাহ হাসপাতালে।
রাজনাথ সিংহ-সহ তাবড় মন্ত্রীরাও বাড়িতে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখলেন রাম-পূজন এবং টুইট
করলেন। রামমন্দির আন্দোলনের পুরোধা তথা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় অভিযুক্ত লালকৃষ্ণ
আডবাণী এবং মুরলীমনোহর জোশীও বাড়িতে, উমা ভারতী অনুষ্ঠানে গেলেও মোদীর ধারেকাছে তাঁকে
দেখা যায়নি।
সকালে অযোধ্যার মাটিতে পা ফেলার পর থেকে
অনুষ্ঠানের মুখ তিনি এবং তিনিই— নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। রাম মন্দির
নির্মাণের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হওয়ায়, যিনি আজ প্রায় ২৯ বছর পরে অযোধ্যায় গেলেন এবং প্রধান
পুরোহিত দুর্গ গৌতম যাঁকে নিয়ে শত মুখে বললেন, ‘‘এমন যজমান আর কোথায় পাওয়া যায়!’’
গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, যে বিজেপি
নেতারা ১৯৯০-৯১ সালে রাম মন্দির আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন, বিশেষ করে লালকৃষ্ণ আডবাণী
ও মুরলিমনোহর জোশী কেন অযোধ্যায় ‘ব্রাত্য’। আজ দুই নেতাই নিজের বাড়িতেই ছিলেন।
অনুপস্থিত মন্ত্রিসভার প্রথম সারির সতীর্থরাও। মোদী-ঘনিষ্ঠ অমিত শাহ-সহ একাধিক মন্ত্রী
করোনা সংক্রমণের কারণে নিভৃতবাসে। হাসপাতাল থেকেই অমিতের টুইট, ‘‘রামের চরিত্র ও আদর্শই ভারতীয় সংস্কৃতির
ভিত্তিপ্রস্তর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মাধ্যমে ভগবান রামের জন্মস্থলে মন্দিরের
শিলান্যাস ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে।’’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আবার
উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্র। তাতেও আমন্ত্রণের শিকে ছেঁড়েনি। অগত্যা টুইট-‘‘অযোধ্যায় ভগবান রামের মন্দির তৈরি হবে,
এই স্বপ্ন দীর্ঘ দিন ধরেই দেখছিলেন দেশের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ সেই
রাষ্ট্রীয় সঙ্কল্পকে কার্যে পরিণত করেন।’’ সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী নাগপুরের বাড়িতে
রাম ভজন গেয়ে দিন কাটান। তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর দিনভর দিল্লির বাড়িতে
বসেই পুজো দেখেছেন টিভিতে। ডাক আসেনি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডারও। তাঁরও ভরসা
টুইট।
বাঘা বাঘা মন্ত্রীদের এমন অনুপস্থিতিতে
বিরোধী নেতাদের কেউ রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, মন্ত্রীরা বুঝে গিয়েছিলেন যে
আমন্ত্রণ পাবেন না। তাই সংক্রমিত হয়ে গেলেন না তো! শাসক শিবির বলছে, সংক্রমণ যাতে না
ছড়ায় তাই অতিথি কম রাখা হয়েছে।
মোদী-ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য বলছেন, মন্দির আন্দোলনে
মোদীর ভূমিকা কম নয়। আর সেই ইতিহাস দেখলে এ দিন একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপিতে মোদীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। শুরুতে ছিলেন দলের সংগঠন সচিব। ১৯৮৯-এ
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ‘রামশিলা পূজন’ তথা ইট সংগ্রহ কর্মসূচি সফল করার পিছনে
মস্তিষ্ক ছিল মোদীর। সঙ্গে পেয়েছিলেন প্রবীণ
তোগাড়িয়াকে। গুজরাতের রাজনীতিতে ক্রমশ ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে থাকে মোদী-তোগাড়িয়া জুটি,।
১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারুচ থেকে হেরে যান কংগ্রেস নেতা তথা গাঁধী পরিবারের
আহমেদ পটেল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গুজরাতের কংগ্রেসের শেষের শুরু সেখান থেকে।
১৯৯০-র সেপ্টেম্বরে শুরু হয় রথযাত্রা
আন্দোলন। গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের একাংশের দায়িত্বে ছিলেন মোদী। এ সময়েই গুজরাত ঘুরে
রাম মন্দির আন্দোলনের পক্ষে জনমত তৈরি করেন তিনি, যা পরে বিধানসভা নির্বাচনে দলের কাজে
আসে। এক নেতার কথায়, ‘‘মন্দির আন্দোলনের সময় থেকেই বাগ্মিতা,
জনসংযোগের দৌলতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে পড়েন মোদী। আডবাণীর রথযাত্রার বড় অংশে
তাঁর পাশে ছিলেন তিনি।’’ সেই পর্বেই, ১৯৯১ সালে অযোধ্যায় যান
মোদী। বিজেপি সূত্রের দাবি, সে সময়েই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, বিতর্কিত স্থলে মন্দির তৈরি
হলে তবেই তিনি সেখানে যাবেন। আজ গেলেন এবং তারপর পুরোটাই মোদী-কাহিনি।

0 মন্তব্যসমূহ