
ডেস্কও ওয়েব ডেস্কঃ আপাতত কিছুদিন কোভিড-১৯ নিয়েই বাঁচতে হবে আমাদের। এমনটাই মনে করছেন এইমসের
ডিরেক্টর তথা ভারতের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় উচ্চপর্যায়ের কমিটির শীর্ষপদাধিকারী রণদীপ
গুলেরিয়া। তিনি বলেন, আমাদের এ জন্য
নতুন কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের
কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ওষুধ আপাতত স্বাস্থ্যকর্মী এবং কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে
যাঁরা এসেছেন তাঁদের জন্যই ব্যবহার্য। ইবোলার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত রেমেডিসিভির
তেমন ভাবে কার্যকর হয়নি বলেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে কাজ যে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে,
সে কথাও বলেছেন গুলেরিয়া।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আড্ডায় এদিনের সাক্ষাৎকারে গুলেরিয়া বলেন,
হটস্পটের দিকে নজর জোরদার করতে হবে,
যাতে সংক্রমণের সংখ্যা কমানো যায়। ভারতে টেস্টের কৌশল
সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল,
যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের পরীক্ষা করা। এর পর যখন সংক্রমণ সংখ্যা ১০ হাজারে
পৌঁছয়, তখন আমরা
প্রতিদিন ৭৫ হাজার জনের টেস্ট শুরু করি।”
কমিউনিটি সংক্রমণ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি
বলেন, সারা দেশে এই
পরিস্থিতি এখনও শুরু হয়নি। মেট্রো শহরগুলিতে কীভাবে রোগ ছড়ানো আটকানো যায়,
সে ব্যাপারে বিভিন্ন কৌশল নিতে হবে বলে মত প্রকাশ
করেছেন গুলেরিয়া। তিনি বলেন, “গোটা বিষয়টায় মাইক্রো স্তরে পরিকল্পনা
দরকার, কেবল সমগ্র
কার্ভ দেখলেই চলবে না।”
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকেও এগিয়ে আসতে হবে বলেছেন
তিনি। “এতদিন পর্যন্ত
বেসরকারি হাসপাতালের তরফে আমরা তেমন কোনও উদ্যোগ দেখিনি। অন্য সমস্ত রকমের
সার্জারি বন্ধ থাকায় প্রাইভেট হাসপাতালের উপর চাপ বেড়েছে। কোভিড-১৯-এ
স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হচ্ছেন এ বিষয়টিও গভীর উদ্বেগের।”
হটস্পটের বাসিন্দাদের গ্রিন জোনে যাতায়াতের বিষয়টি নিয়েও নজরদারি দরকার বলে মত
প্রকাশ করেছেন গুলেরিয়া। তিনি বলেন, “পরিযায়ীদের মত যাঁরা হটস্পট থেকে
গ্রিন জোনে যাচ্ছেন, তাঁদের বাধ্যতমূলকভাবে
১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে থাকা উচিত।”
একবার সেরে ওঠার পর ফের কেউ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হতে
পারেন কিনা, সে নিয়ে প্রশ্ন
করা হলে ডক্টর গুলেরিয়া বলেন, “যদি কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির রক্তে
অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাহলে তাঁর
পুনঃসংক্রমণের সম্ভাবনা কম। আমরা জানি না অ্যান্টিবডি কতদিন প্রতিরোধ করতে পারে।
আমরা দেখেছি, এই ভাইরাস
শরীরে দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায়।”
এইমস ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন সারা দেশের বিভিন্ন জায়গার জন্য বিভিন্ন
কৌশল নিতে হবে। “সকলের জন্য একরকমের দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করবে না। হটস্পট এলাকায় নিয়মিত নজরদারি
চালাতে হবে।”

কোভিড১৯ কীভাবে প্রতিরোধ করা যাবে, সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ নিজেকে অভিযোজিত করে
নিয়েছে। সার্স অনেক বেশি নিম্ন শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটাত। মার্স তত সংক্রামক ছিল
না। কোভিড-১৯ ঊর্ধ্ব শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায় এবং সে কারণে আরও বেশি সংক্রামক।”
এদিনের সাক্ষাৎকারে সতর্কবাণী হিসেবে ডক্টর গুলেরিয়া জানিয়ে দিয়েছেন শীতকালে
ফের কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে। তিনি বলেন, “এটা একটা
দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ হিসেবেই দেখতে হবে, যা অন্তত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলবে।”
এইমস ডিরেক্টর বলেছেন ভারতে কোভিড ১৯ কার্ভ এখনও নিম্নমুখী নয়। তাঁর বক্তব্য,
এ ব্যাপারে কমিউনিটি স্তরে জোরদার কাজ করতে হবে।
গুলেরিয়ার কথায়, “আর্থিক কর্মকাণ্ড ও সোশাল ডিসট্যান্সিংয়ের নয়া স্বাভাবিকত্ব
কীভাবে লাগু করা যায় তার খোঁজ চালিয়ে যেতে হবে আমাদের। এর সমাধান রয়েছে কমিউনিটি
স্তরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এই লড়াই লড়তে হবে কমিউনিটি স্তরে,
হাসপাতাল স্তরে নয়।”
রণদীপ গুলেরিয়া কোভিড ১৯ মোকাবিলায় জাতীয় টাস্ক ফোর্সের ক্লিনিকাল রিসার্চ
গ্রুপের প্রধান। তিনি বলেন, “ভারতে তিন চারটি গবেষণা
অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চলছে। একটি হল প্লাজমা থেরাপি অবং বিসিজি টিকার উপযোগিতা
এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা। আমরা আগামী কয়েকমাসের মধ্যে উত্তর পাব
বলে আশা করছিষ আমরা একই সঙ্গে আমাদের দেশে কোভিড ১৯-এর উপর আর্দ্রতা এবং
ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের দিকেও লক্ষ্য রাখছি।”
অ্যান্টিবডি টেস্টকে ডায়াগনোস্টিক টেস্ট বলে মানতে নারাজ তিনি। তাঁর কথায় নাক
ও গলার লালার পরীক্ষাই মান্য। “অ্যান্টিবডি টেস্ট অনেকটা নজরদারির জন্য। এটা কোন
ডায়াগনোস্টিক মানক নয়। সার্স ও মার্সের সময়েও এই টেস্ট ক্লিনিকাল পরীক্ষা হিসেবে
খুব একটা মান্যতা পায়নি।”
কোভিড উত্তর পৃথিবীতে বাস্তবসম্মত কৌশল নিতে হবে এবং সরকারকে আর্থিক কাজকর্ম
শুরু করা এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে
বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, “নিরাপত্তাবিধির কথা মাথায় রেখে
বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ করতে হবে।”

0 মন্তব্যসমূহ