
ডেস্কও ব্যুরোঃ রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়ার পরই রাজ্য সরকার
প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই মহিলার ট্রাভেল হিস্ট্রি নিয়ে
কোয়ারেন্টাইনে রাখার পর্ব অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার মহাকরণে উদয়পুরের গোঁকুলপুর
এগ্রিকালচার চৌমুহনীর ৪৫ বছর বয়স্কা মহিলার ট্র্যাভেল হিস্ট্রি সম্পর্কে অবগত করেন
মন্ত্রী রতন লাল নাথ।
তিনি বলেন করোনা আক্রান্ত মহিলা গত ১৪ মার্চ আগরতলা থেকে গুহাটির উদ্দেশ্যে
যাত্রা করেন। ১৫ মার্চ গৌহাটি পৌঁছে কামাক্ষা মন্দির সংলগ্ন একটি হোটেলে উঠেন।
এরপর ১৬ মার্চ পল্টন বাজার সুখমনি হোটেলে উঠেন মন্দির দর্শন শেষে। ১৭ মার্চ
সেখানেই ছিলেন তিনি। ১৮ মার্চ ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসে এস-৫ বগিতে চেপে
রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ১৯ মার্চ ভোর ৩ টায় আগরতলা রেল স্টেশনে পৌঁছান।
এইদিন ভোরেই ট্রেনে করে উদয়পুর যান করোনা আক্রান্ত মহিলা। এর মধ্যে তিনি বারিতেই
ছিলেন। গত ৩ এপ্রিল গোমতী জেলা হাঁসপাতালের আউট ডোরে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ডাক্তার দেখাতে যান সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে। তবে হাসপাতালে ভুল বসত তার
নাম পরিবর্তিত হয়। মহিলার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দীর্ঘ দিনের। সেই মোতাবেক চিকিৎসক
মহিলাকে ঔষধ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ৩ এবং ৪ এপ্রিল মহিলা বারিতেই ছিলেন। ৫
এপ্রিল প্রাইভেট এম্বুলেন্সে করে দুপুর ২.৩০ মিনিট থেকে ৩ টার মধ্যে আইএলএস
হাঁসপাতালে পৌঁছান।
কিন্তু সেখানে প্রবেশের পথেই চিকিৎসক টার ট্র্যাভেল হিস্ট্রি যাচাই করে জিবি
হাঁসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। জিবি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মহিলার পরীক্ষার পর
তাকে ফ্লু-ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। সেইখানে মহিলার কেইস হিস্ট্রি নেওয়ার পর পুনরায়
জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগ থেকে তখন মহিলাকে ফেমিলি মেডিসিন বিভাগে
পাঠানো হয়। সিনিয়র চিকিৎসক তাকে ফ্লু-ওয়ার্ডের আইসোলেশনে পাঠান। ৬ এপ্রিল মহিলার
নমুনা পরীক্ষার পর রাত ৮ টায় রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

বর্তমানে মহিলার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান
মন্ত্রী রতন লাল নাথ। এখনো পর্যন্ত হাই রিস্ক হিসাবে চার জনকে টেপানিয়া ব্লক
সংলগ্ন উপজাতি অতিথি শালায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিন জন পরিবারের সদস্য ও
একজন বেসরকারি এম্বুলেন্স চালক। অন্যদিকে ঐ এলাকার ৩৪ জনকে পিআরটিআই-এ রাখা হয়েছে।
মহিলার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর অমরপুরের এক আত্বিয়কে সাগরিকা লজে কোয়ারেণ্টাইন
করা হয়েছে। গোমতী জেলায় মোট ৩৯ জনকে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেণ্টাইনে রাখা হয়েছে।
এইদিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী ৭ জনকে গিতাঞ্জলি অতিথি শালায় ফেসিলিটি
কোয়ারেণ্টাইনে রাখা হয়েছে। রানীরবাজারের মহিলার আত্বিয়দের কোয়ারেণ্টাই করা হয়েছে
ভগৎসিং যুব আবাসে। হাসপাতালের ১৮ জন কর্মী ও প্যারামেডিকেল স্টাফকে হোম
কোয়ারেণ্টাইনে রাখা হয়েছে। সিপাহীজলা জেলায় ১০ জনকে হোম কোয়ারেণ্টাইনে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকদের অনুমান ১৮ ও ১৯ মার্চের মধ্যে মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেই
অনুযায়ী রেলের এস-৪ ও এস-৫ এর ৩২ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ফ্যাসিলিটি
কোয়ারেণ্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ২২৫
টি নেগেটিভ এসেছে। একমাত্র উদয়পুরের মহিলার রিপোর্ট পজেটিভ পাওয়া গেছে। হাইরিস্কে
থাকা ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রাজ্যে ১,৪০০ টেস্টিং কিট রয়েছে। আরও ২ হাজার কিট সহসাই এসে পৌঁছাবে।
নীতি আয়োগ থেকে ৭ কোটি ও এনএসসি থেকে ৩ কোটি সব মিলিয়ে ১০ কোটি টাকা কোভিড-১৯ এর
জন্য পৃথক হাসপাতালের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এই তথ্য দেন মন্ত্রী রতন লাল
নাথ।মন্ত্রী রতন লাল নাথ আরও জানান সমগ্র বিশ্ব সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বিরাজ মান। এই
অবস্থায় কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটা কঠিন সময় অতিবাহিত
করছে রাজ্যের মানুষ। এই সময়ে একতা থাকা উচিত। কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেই দিকে
লক্ষ্য রেখে সকলের মন্তব্য করা উচিত। অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই বাড়ি থেকে না
বেরহতে আহ্বান জানান তিনি। কোন ধরনের তথ্য থাকলে তা প্রশাসনের নজরে নিয়ে সহায়তা
করার আহ্বানও জানান।

0 মন্তব্যসমূহ