
ডেস্কও ওয়েব ডেস্কঃ দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টার সর্ব দলীয় বৈঠক মহাকরণে। খোলামেলা আলোচনা করোনা
পরিস্থিতি নিয়ে। ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজ্যের সুনাম বজায় রাখার আহ্বান। আগামি ১৫ মে থেকে
FCI-র মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান
ক্রয় করা হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটা জানান মুখ্যমন্ত্রী
বিপ্লব কুমার দেব।
গোটা দেশের মধ্যে ফের একবার নজীর সৃষ্টি করলো রাজ্য সরকার। বুধবার
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের পৌরহিত্যে মহাকরণে অনুষ্ঠিত হয় সর্বদলীয় বৈঠক।
এইদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মণ,
আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ, বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার, মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব তথা স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব এস.কে
রাকেশ, রাজ্য পুলিশের
ভারপ্রাপ্ত মহানির্দেশক রাজীব সিং, অর্থ দপ্তরের সচিব সহ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। সর্বদলীয় বৈঠকে সমস্ত রাজনৈতিক
দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই মোতাবেক বিজেপির পক্ষে ছিলেন প্রদেশ
বিজেপির সহসভাপতি ডাক্তার অশোক সিনহা, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পীযুষ বিশ্বাস, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাস, আইপিএফটি, এসইউসিআই, লোক জনশক্তি
পার্টি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে বৈঠকে মার্চেন্ট
এসোসিয়েসান সহ বেশকিছু নাগরিক অংশ নেয় বৈঠকে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশ ও রাজ্য জুড়ে
চলছে লক ডাউন। এই অবস্থায় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সাধারন মানুষের স্বার্থে একাধিক
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে। কিন্তু করোনার জেরে লক ডাউন চলায়
সঙ্কটের মুখে অর্থনীতি ও কাজকর্ম। এর প্রভাব পড়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান,
কৃষি, ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান সহ একাধিক ক্ষেত্রে। কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা সমস্যায়
জর্জরিত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও প্রভাবিত। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের মতামত সম্পর্কে অবগত হতেই এই সর্ব দলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। লক ডাউন পরবর্তী
পরিস্থিতিতে কিভাবে রাজ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং রাজ্যের অর্থনীতিকে
চাঙ্গা করা যায় সেই বিষয়ে রাজনৈতিক দল গুলির মতামত নেওয়া হয়। এইদিনের বৈঠকে ১৮ টি
দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু ১৬ টি দল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে। বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা
ধরে। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে
জানান রাজনৈতিক দল গুলির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাব রাজ্য সরকার নেবে।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলা এক দিনে সম্ভব নয়। তার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল রাজ্যবাসীর কাছে যাবে সচেতনতা মূলক বার্তা
নিয়ে। করোনা মোকাবেলার একমাত্র উপায় লক ডাউন। এই লক ডাউন থেকে পর্যায়ক্রমে কিভাবে
বের হতে হবে তার জন্য লম্বা সময়ের প্রয়োজন। আন্তরাজ্য বাস, ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। লক ডাঊনকে জীবনের ব্যবস্থা হিসাবে মেনে
নিতে হবে। প্রতিষেধক বের না হওয়া পর্যন্ত কোন না কোন ভাবে লক ডাউন থাকবেই। এইটা
মেনেই কাজ করতে হবে। ত্রিপুরার অর্থনীতি যে ভাবে চলছে তা পিছিয়ে যাবে না বলে আশা
ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি আরও জানান ১৫ মে থেকে FCI-র মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে। মহামারিতে
সবকিছু ঠিক হবে এইটা হতে পারেনা। এইটা সকলকে মেনে চলতে হবে বলে জানান তিনি।

পরে নিজ কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন করে আইন মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন ১৬ টি দলের
প্রতিনিধিদের নিয়ে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে
রাজ্য সরকার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামি কি কি পরিকল্পনা রয়েছে তা পাওয়ার
প্রেজেন্টেশানের মাধ্যমে সকলকে অবগত করা হয়েছে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল সরকারী এই
ব্যবস্থাকে সাদুবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্য
সরকার যা যা পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে
বিরোধী দল গুলি তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। এই বিষয়গুলি রাজ্য সরকার বিবেচনা করে
দেখছে। তবে এই পরিস্থিতিতে একজোট ও ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজ্যের সুনাম বজায় রাখার
আহ্বানে সহমত ব্যক্ত করেছে রাজনৈতিক দল গুলি। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আগামিদিনে
বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী রতন লাল নাথ। তবে এইদিনের সর্ব দলীয়
বৈঠক থেকে করোনা মোকাবেলায় সজাগ সচেতন থাকার বার্তা এসেছে। কোন ভাবেই যাতে কেউ ভয়
না পায় সেদিকে নজর দেওয়ার দাবি উঠেছে। লক ডাউন তোলার ক্ষেত্রে এখনই কেউ স্পষ্ট
কিছু বলেনি। চিন্তা ভাবনা করে ধাপে ধাপে লক ডাউন তোলার বিষয়টি সর্ব দলীয় বৈঠকে
স্থান পেয়েছে।
প্রাইভেট চেম্বার খোলা এবং অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর প্রস্তাব
এসেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্থান সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে যাতে করে
একজন কোরডিনেটর ঠিক করা হয়। তিনি রাজ্যের আটকে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে
গাড়ির ব্যবস্থা করবেন। বর্তমানে রাজ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ২৩১ জন।
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৭৬জন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৭
জনের। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪ হাজার ৬১৩ জনের।

0 মন্তব্যসমূহ