
ডেস্কও ব্যুরোঃ আজ, রবিবার, রাত ন’টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে যে
ন’মিনিটের জন্য দেশব্যাপী ‘লাইটস অফ’ কর্মসূচি পালিত হতে চলেছে, তার ধাক্কা
সামলাতে একাধিক জটিল আপৎকালীন পদক্ষেপের সূচনা করেছে দেশের ‘গ্রিড
অপারেটর’ বা বিদ্যুৎবলয় নিয়ন্ত্রক। যাতে আচমকা গ্রিডের ওপর বিপুল হারে লোড
কমে গিয়ে ফের বেড়ে যাওয়ার ফলে কোনোরকম বিপত্তি না ঘটে।
এইসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে থার্মাল উৎপাদন কমিয়ে হাইড্রো এবং
গ্যাস-পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির উৎপাদন বাড়ানো, যাতে ‘লাইটস অফ’
চলাকালীন আরও সহজে বিদ্যুতের চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রাখা যায়, সমস্ত
কর্মীকে ডিউটিতে থাকতে বলা, এমনকি চরম অবস্থায় ‘ব্ল্যাক স্টার্ট
ফ্যাসিলিটি’-র জন্যও তৈরি থাকা। অর্থাৎ, ন’মিনিট আলো নিভিয়ে রাখার পর
দেশজুড়ে অতিরিক্ত চাহিদার ফলে যদি গ্রিড বিকল হয়ে পড়ে, তবে তা একেবারে শুরু
থেকে চালু করার প্রক্রিয়া।
আজকের কর্মসূচি নিয়ে একাধিক রাজ্য
হুঁশিয়ারি দেয় রাষ্ট্রীয় গ্রিড অপারেটর পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন কর্পোরেশন
(POSOCO)-কে, যার ফলে শনিবার প্রতিটি রাজ্য, অঞ্চল এবং জাতীয় স্তরের লোড
ডেসপ্যাচ সেন্টারের কাছে পৌঁছে যায় একটি ৩০-দফার নির্দেশিকা। মূল উদ্দেশ্য
হলো, আচমকা বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়া এবং তারপর বেড়ে যাওয়ার ফলে যে
ভারসাম্যের অভাব ঘটবে, যাকে “নজিরবিহীন” বলে অভিহিত করেছে POSOCO, তা
সমাধান করা।
শনিবারই অবশ্য এক বিবৃতি জারি করে বিদ্যুৎ মন্ত্রক জানায়, “এইসব আশঙ্কা
অমূলক। ভারতের বিদ্যুৎবলয় অতিশয় মজবুত এবং স্থিতিশীল, এবং চাহিদার তারতম্য
ঘটলে তার সঙ্গে তাল রাখার মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।”
তবে বিবৃতিতে একথাও বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র আলো নেভানোর
কথা বলেছেন, অন্যান্য যন্ত্রপাতি বা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নয়। “মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর আবেদন, ৫ এপ্রিল রাত ন’টা থেকে ৯.০৯ পর্যন্ত শুধুমাত্র
বাড়ির আলো নিভিয়ে রাখুন। রাস্তার আলো, অথবা কম্পিউটার, টিভি, ফ্যান, ফ্রিজ,
বা এসি বন্ধ করে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এছাড়াও হাসপাতাল, এবং অন্যান্য
জরুরি পরিষেবা, যেমন পুরসভা, যে কোনও জনপরিষেবার অফিস, থানা, উৎপাদনকারী
কলকারখানা, এ সমস্ত স্থানে আলো জ্বলবে… সমস্ত পুরসভাকে বলা হয়েছে
জনস্বার্থে রাস্তার আলো জ্বালিয়ে রাখতে।”
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (Press Information Bureau বা PIB)-র অধিকর্তা কে
এস ধাতওয়ালিয়া দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, রবিবার মোমবাতি জ্বালানোর
সময় যেন কেউ অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার না করেন।
গ্রিড
ম্যানেজারদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে গেলে, সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় হলো
এই যে, রাত ন’টার ঠিক আগে অভূতপূর্ব ভাবে লোড কমে যাওয়ার সম্ভাবনা, এবং
৯.০৯ বাজলেই ফের তীব্র গতিতে লোড বেড়ে যাওয়া। এই ‘লাইটস অফ’ চলাকালীন
দেশজুড়ে ১১,৩৪৪-১২,৮৭৯ মেগাওয়াট লোড হঠাৎ করে কমে গিয়ে ফের বেড়ে যাবে বলে
মনে করা হচ্ছে – যার অর্থ হলো পাঁচটি থার্মাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের
একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
বিদ্যুৎবণ্টন সংস্থাগুলিকে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে যেন সাব-স্টেশন,
আবাসিক সোসাইটি, এবং বড় অ্যাপার্টমেন্টগুলির মেইন সুইচ অফ না করা হয়।
উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একাধিক আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যের যে
সময়টা চাহিদা তুঙ্গে থাকে – অর্থাৎ ৬.১০ থেকে রাত ৮.০০ টা – সেসময় হাইড্রো
উৎপাদন কমিয়ে “সংরক্ষণ” করা হবে রাত ন’টার কর্মসূচীর জন্য। ওই সময়ের চাহিদা
মেটাতে থার্মাল এবং গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির উৎপাদন বাড়িয়ে দেওয়া
হবে। ‘পিক আওয়ার্স’ পেরিয়ে গেলে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেওয়া হবে থার্মাল উৎপাদন।
বিশ্বের পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত বিদ্যুৎবলয়গুলির মধ্যে অন্যতম বৃহৎ হলো
ভারত, যার উৎপাদন-ক্ষমতা ৩৭০ গিগাওয়াট (৩ লক্ষ ৭০ হাজার মেগাওয়াট), এবং
স্বাভাবিক ‘বেস লোড’ বিদ্যুতের চাহিদা আন্দাজ ১৫০ গিগাওয়াট।
যখনই কোনোরকম বিপর্যয় ঘটে, যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঘাটতি বা ট্রান্সমিশন
লাইন বিকল হওয়া অথবা অকস্মাৎ বিদ্যুতের চাহিদায় পরিবর্তন, গ্রিড পরিচালকের
কাজ হলো এটা নিশ্চিত করা যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে সংশোধনী
ব্যবস্থা। তা যদি না হয়, তবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে বিপদ কাটাতে, হয়
চাহিদা কমিয়ে নাহয় অন কোনও উৎস থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ টেনে। এবং এ সবই করতে
হবে অতি দ্রুত।
স্বাভাবিক অবস্থায় দেশের মোট বৈদ্যুতিক চাহিদার ৩০-৩২ শতাংশ হলো গৃহজাত
চাহিদা। ভারতে মোট বৈদ্যুতিক চাহিদার লোড পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, শিল্প
এবং কৃষিক্ষেত্রের চাহিদা যথাক্রমে ৪০ এবং ২০ শতাংশ, এবং বাণিজ্যিক
ক্ষেত্রে চাহিদার পরিমাণ আট শতাংশ। সুতরাং, শুধুমাত্র বাড়ির আলো নেভানো হলে
স্বাভাবিক সময় বিদ্যুৎবলয়ের ফ্রিকোয়েন্সি-র ওপর খুব একটা চাপ পড়ার কথা নয়।
এক, বর্তমানে গ্রিডের যা লোড, তার অধিকাংশই গৃহজাত, বিশেষ করে ২৬
মার্চের লকডাউনের পর থেকে। এর ফলে ১৫০ গিগাওয়াটের স্বাভাবিক চাহিদা
ইতিমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, যেহেতু অধিকাংশ কলকারখানা এবং
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। হোটেল, কারখানা, মল, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর
বন্ধ থাকার ফলে গৃহজাত চাহিদাই এখন মোট চাহিদার সবচেয়ে বড় অংশ। অতএব
স্রেফ আলো জ্বালানোর লোড এখন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি, যার ফলে দেশময়
হঠাৎ করে সব আলো নিভে গেলে ফ্রিকোয়েন্সির অদলবদল অনেক বেশি জানান দেবে।
তবে আশা জাগাচ্ছে এয়ার-কন্ডিশনিং। উত্তর ভারতে এখনও এর ব্যবহার পুরোদমে
শুরু না হলেও পশ্চিম এবং দক্ষিণে এয়ার-কন্ডিশনিংয়ের দৌলতে ইতিমধ্যেই বেড়েছে
বিদ্যুতের চাহিদা, যার ফলে আলো নেভালে গ্রিডের ওপর তার অতটা প্রভাব নাও
পড়তে পারে।

0 মন্তব্যসমূহ