
গাড়ি দুর্ঘটনার পিছনে চক্রান্ত রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলেই এবার সিবিআই
তদন্তের দাবি জানাল উন্নাওয়ের নির্যাতিতার পরিবার। রবিবার রায়বরেলি যাওয়ার
পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় জখম হন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। ট্রাক-গাড়ি সংঘর্ষে
মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার দুই আত্মীয়ের। ওই গাড়িতে ছিলেন নির্যাতিতার
আইনজীবীও। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী। উল্লেখ্য,
২০১৭ সালে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ
করেছিলেন ওই তরুণী।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রায়বরেলি জেলা
সংশোধনাগারের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন নির্যাতিতা।
দুর্ঘটনায় নিহতরা নির্যাতিতার
দুই আত্মীয় বলে জানা গিয়েছে। আহত অবস্থায় নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী
লখনউইয়ে কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন
রয়েছেন। গোটা ঘটনার পিছনে বিজেপি বিধায়কের চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে
নির্যাতিতার পরিবার। এ প্রসঙ্গে নির্যাতিতার এক আত্মীয় বলেন, ‘‘বিধায়ক
কুলদীপ সিং ও তাঁর সহযোগীর পরিকল্পিত চক্রান্ত। মামলা তুলতে এসব করে ভয়
দেখানো হচ্ছে। গ্রামের সকলে জানত যে, ওরা রায়বরেলি জেলে যাচ্ছিল’’।
উল্লেখ্য, গত বছর ধরে জেলবন্দি নির্যাতিতার এক আত্মীয়। গত ৫ মাস আগে উন্নাও
থেকে রায়বরেলির জেলে সরানো হয় তাঁর আত্মীয়কে।
তাঁদের পরিবারকে মুছে ফেলার চক্রান্ত করা হচ্ছে। এ অভিযোগ করলেন উন্নাও
ধর্ষণ কাণ্ডের নিগৃহীতার মা। দুর্ঘটনায় আহত নিগৃহীতার অবস্থা আশঙ্কজনক।
তাঁর মা সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন, “এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়, আমাদের
সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনায় সহ অভিযুক্তের ছেলে এবং গ্রামের আরেক যুবক আমাদের হুমকি দিয়েছিল। ওরা বলেছিল, ওরা আমাদের দেখে নেবে।”

এ ঘটনায় ট্রাক চালক আশিসকে
গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লালগঞ্জের সার্কেল অফিসার লক্ষ্মীকান্ত গৌতম
জানিয়েছেন, ধৃত ট্রাক চালককে জেরা করা হচ্ছে। ইট নিয়ে লালগঞ্জের দিকে
যাচ্ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ট্রাক চালক। এদিকে, উত্তরপ্রদেশের ডিজিপি
ওপি সিং বলেন, নির্যাততা নিজেই নিরাপত্তারক্ষীকে সঙ্গে নিতে চাননি।
সংবাদসংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘‘ওঁর নিরাপত্তায় কোনও গাফিলতি ছিল না।
গাড়িতে জায়গা না থাকায়, উনি অনুরোধ করেছিলেন, যাতে নিরাপত্তারক্ষী না
থাকেন’’। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা ভাল করে তদন্ত করব। প্রাথমিক
ভাবে মনে করা হচ্ছে, এটা দুর্ঘটনা। ট্রাক চালক ও মালিককে গ্রেফতার করা
হয়েছে। যদি পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবি জানায়, তাহলে আমরা সিবিআইয়ের হাতে এ
মামলা তুলে দেব’’।

বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার এবং আরও ৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হল। উন্নাওয়ের ধর্ষিতা মহিলার পরিবারের তরফ থেকে রবিবারের দুর্ঘটনাকে চক্রান্ত বলে অভিহিত করার পর এই এফআইআর দায়ের করা হল। রবিবারের দুর্ঘটনা উন্নাওয়ের ধর্ষিতার মাসি ও পিসি মারা গিয়েছেন।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (হত্যা), ৩০৭
(হত্যার চেষ্টা), ৫০৬ ( হুমকি), ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় ১০
জনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তার মধ্য রয়েছেন বিজেপি বিধায়কও। এফআইআর
হয়েছে আরও ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধেও।”
নিগৃহীতার কাকা এখন রায়বেরিলি জেলে রয়েছেন। তিনিও অভিযোগ করেছেন,
সেঙ্গারের সমর্থকরা নিগৃহীতার পরিবারে ফোন করে আদালতে বয়ান বদল করার জন্য
চাপ দিত।
তিনি বলেছেন, আমি নিশ্চিত ওদের সবাইকে মেরে ফেলার জন্য গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল। এর পিছনে বিজেপি বিধায়ক ও তার লোকজন রয়েছে।
নিগৃহীতার মা দুর্ঘটনাতে পরিবার মুছে ফেলার চক্রান্ত বলে দাবি করার কয়েক
ঘণ্টা পরই এফআইআর দায়ের করা হয়। নিগৃহীতা মহিলার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি
লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
তাঁর মা সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন, “এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়, আমাদের সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ এপ্রিল উন্নাওয়ের ঘটনা সামনে আসে। বিজেপি বিধায়কের
বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে সরব হন নির্যাতিতা। উত্তরপ্রদেশের
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের বাইরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন
নির্যাতিতা। যে ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। পরে গ্রেফতার করা হয় বিজেপি
বিধায়ককে। সিবিআই সূত্রে খবর, ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার মা ও আত্মীয়
সাক্ষী।
0 মন্তব্যসমূহ