
রবিবার দুপুরে রায় বরেলির হাইওয়েতে ছিলেন অর্জুন যাদব, যে সময় উন্নাওয়ের ধর্ষিতা তরুণীর গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে একটি ট্রাকের, যে ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর দুই আত্মীয়ার, এবং গুরুতর আহত হন তিনি নিজে এবং তাঁর উকিল।
“ভুল দিক (রং সাইড) থেকে খুব জোরে আসছিল ট্রাকটা। অ্যাকসিডেন্টের পর
ট্রাক ফেলে পালায় ড্রাইভার আর তার ক্লিনার,” জানান
যাদব, যাঁর একটি দোকান রয়েছে পোর দাউলি মোড়ে, যেখানে ঘটে দুর্ঘটনা।
এলাকার অন্যান্য কিছু দোকানদার, যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি
করেছেন নিজেদের, জানিয়েছেন যে ভারী বৃষ্টির মধ্যে তাঁরা দেখতে পান, ভুল দিক
থেকে ছুটে আসছে ট্রাক। “পোর দাউলি মোড়ে একটা বাঁক আছে রাস্তায়, ট্রাক
ড্রাইভার রাস্তার রং সাইডে ছিল। হঠাৎ ঘুরে রাস্তার অন্যদিকে যাওয়ার চেষ্টা
করে, এবং গাড়িটা উল্টোদিক থেকে এসে খুব জোরে ধাক্কা খায় ট্রাকের একপাশে,”
বলেন দোকানদার রমেশচন্দ্র যাদব।
রমেশ আরও জানান, “প্রায় ১০ মিটার
গাড়িটাকে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার পর থামে ট্রাকটা। আমরা স্পটে পৌঁছনোর আগেই
ট্রাকের ড্রাইভার আর ক্লিনার নেমে ক্ষেতের মধ্যে দৌড়ে পালিয়ে যায়। যেহেতু
আমরা সবাই গাড়ির প্যাসেঞ্জারদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, সেহেতু ড্রাইভার আর
ক্লিনারকে কেউ তাড়া করতে পারি নি।”
পুলিশে খবর দেন অপর একজন দোকানদার,
এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার
ব্যবস্থা করে পুলিশ। রায় বরেলির জেলা হাসপাতালেই মৃত ঘোষিত হন তরুণীর এক
আত্মীয়া। বাকি তিনজনকে পাঠানো হয় লখনৌতে, যেখানে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান
আরও এক আত্মীয়া।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী গয়া প্রসাদ (৫৪) দাবি
করেন যে ট্রাক ড্রাইভারের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। “দোকান খোলার আগে আমিও
ট্রাক চালাতাম। এভাবে রাস্তায় কেউ ভারী গাড়ি চালায় না। একটা নম্বর প্লেটে
কেন কালো রং করা ছিল, তাও খতিয়ে দেখা উচিত,” বলেন তিনি। সঙ্গে অর্জুন যোগ
করেন, “এর পেছনে কোনও চক্রান্ত আছে কিনা দেখা উচিত পুলিশের।”
মঙ্গলবার এই সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেয় কেন্দ্র।
ট্রাকের ড্রাইভার আশিস পাল (২৪), ক্লিনার মোহন এবং ট্রাকের মালিক দেবেন্দ্র
কিশোর এখনও পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। লখনৌ জোনের এডিজি রাজীব কৃষ্ণ বলেন,
“পুলিশ মামলার প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখছে এবং প্রতিটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই
করছে।”
ঘটনাস্থল থেকে আন্দাজ ৮০ কিমি দূরে ফতেপুর জেলায় ওথি গ্রামের বাসিন্দা
আশিস পালের পরিবারের দাবি, তিনি নির্দোষ। “কোনও চক্রান্ত নেই। আমরাও চাই
সিবিআই তদন্ত করুক,” বলছেন আশিসের মা রাজরানী। “আমার ছেলে কোনোরকম অন্যায়
কাজে জড়িত থাকলে আমরা মাটির ঘরে থাকতাম না। আমাদের তো বাড়িতে একটা টিভি বা
ফ্রিজ পর্যন্ত নেই।”
ক্লাস এইট অবধি পড়াশোনা করেছেন আশিস, ট্রাক চালাচ্ছেন গত চার বছর। তাঁর
দুই দাদা পঙ্কজ এবং সুনীলও পেশাদার ট্রাক চালক। “আশিস ট্রাক চালানোয়
এক্সপার্ট ছিল। আমাদের মনে হয় রবিবারের অ্যাকসিডেন্টের দায় গাড়ির
ড্রাইভারেরই,” বলেন পঙ্কজ, যিনি একথাও জানিয়েছেন যে ট্রাকের মালিক
দেবেন্দ্র কিশোর তাঁদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
ওদিকে দেবেন্দ্রর দাদা তথা প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টির ফতেপুর জেলা
সম্পাদক নন্দকিশোর পাল বলেন, “ভাই গত বছর ট্রাকটা কেনে, কানপুরের এক
সংস্থার কাছ থেকে টাকা নিয়ে। টাকাপয়সার টানাটানি হওয়ায় গত চারটে কিস্তির
টাকা ফেরত দিতে পারে নি। কাজেই ট্রাকটা ওর কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে, সেই
ভয়ে একটা নম্বর প্লেটের ওপর কালো রং করিয়ে নেয়। আর কোনও কারণ নেই।”
নন্দকিশোর আরও জানান, “প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে
সমাজবাদী পার্টির সদস্য ছিলাম আমি। ২০০৩ সালে ফতেপুরের জেলা সম্পাদক ছিলাম,
তারপর ২০০৫-এ রাজ্য কমিটির সদস্য হই।”
নন্দকিশোর দাবি করেছেন, উন্নাওয়ের ধর্ষণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত
বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ নেই তাঁর।
“আমাদের পরিবারের কেউ কোনোদিন সেঙ্গারের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমার ভাই
নির্দোষ, এই ঘটনার পেছনে কোনোরকম চক্রান্ত নেই। ওই ক্লিনার মোহনও আমাদের
সঙ্গে রয়েছে গত ছয় বছর ধরে।”
0 মন্তব্য