
ত্রেতা যুগে রামচন্দ্রের সেতু বানানোর কথা
কারোর অজানা নয়৷ ভারতবর্ষের সঙ্গে লঙ্কাকে যোগ করতে সেতু বানিয়েছিলেন
শ্রীরামচন্দ্র৷ সেই সেতু নিয়ে বিতর্ক আজও মেটেনি৷ ভারত-শ্রীলঙ্কার মাঝে
একটি হালকা রেখা আজও মহাকাশ থেকে চোখে পড়ে৷ হিন্দু ধর্মের অনেকে মনে করেন
সেটি রামচন্দ্রের বানানো সেই সেতুর অংশ৷ কিন্তু সেই সেতুর রহস্য এখনও
অমীমাংসিত৷
কিন্তু সম্প্রতি বৈজ্ঞানিকরা এই রহস্যের
সমাধান করেছেন৷ জানা গিয়েছে কীভাবে রাম এমন পাথরের সেতু নির্মাণ করতে
পেরেছিলেন যা সমুদ্রেও ভাসত? কথিত আছে, এই সেতু বানানোর জন্য পবনপুত্র
হনুমান সাহায্য করেছিলেন রামচন্দ্রকে৷ যে পাথরগুলি দিয়ে সেতুটি বানানো
হয়েছিল সেগুলি ডোবেনি৷ সমুদ্রে ভাসছিল৷ কিন্তু কেন?
- কী বলছেন বৈজ্ঞানিকরা?
গবেষণায় জানা গিয়েছে, রামসেতু নির্মাণের
জন্য যে পাথরগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলো ছিল বিশেষ ধরণের৷ সাদা
বাংলায় যাকে বলে ঝামা পাথর, ইংরেজিতে পিউমিস স্টোন৷ আগ্নেয়গিরির লাভা
থেকে তৈরি হয় এই পাথর৷ যখন উত্তপ্ত লাভা ঠাণ্ডা বায়ুর সংস্পর্শে আসে, তখন
তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে৷ কখনও কখনও ঠাণ্ডা হয়ে এগুলো বড় পাথরের
আকার ধারণ করে৷ এর ফলে এমন পাথর তৈরি হয় যাতে অনেক ছিদ্র থাকে৷ তাই এই
পাথর স্পঞ্জি আকারের হয়৷ ফলে এর ওজনও সাধারণ পাথরের চেয়ে কম হয়৷
এই পাথরের ছিদ্রগুলোতে বায়ু ভর্তি থাকে৷
সেই কারণে সহজে এই পাথর জলে ডোবে না৷ কিন্তু জলের মধ্যে থাকলে ধীরে ধীরে
বায়ুর জায়গায় ছিদ্রগুলোতে জল ঢুকতে থাকে৷ ফলে ওজন বেড়ে যায়৷ ফলে
স্বাভাবিক কারণেই পাথরগুলো ডুবে যায়৷ এই কারণেই রাম সেতুর পাথরগুলো ক্রমশ
এক এক করে সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে৷ বেঁচে রয়েছে মাত্র কয়েকটি৷ নাসা সেটি
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খুঁজে বের করেছে৷
রামায়ণ মহাকাব্য বলছে, সীতাকে অপহরণ করে
রাবণ তাঁকে স্বর্ণলঙ্কায় নিয়ে যান৷ তখন সীতাকে উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র
সমুদ্রের উপর সেতু নির্মাণ করেন৷ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে রয়েছে একটি
সমুদ্র৷ সমুদ্রের বিস্তার তেমন নেই৷ কিন্তু তাহলেও সেটি পারাপারের জন্য
সেতু তো দরকার৷ সেই কারণেই নির্মাণ হয়েছিল পাথরের সেতু৷ পরে তার নাম হয়
রামসেতু৷ কথিত আছে, মাত্র ৫ দিনে এই সেতু নির্মাণ শেষ করেছিল বানর সেনা৷
সেতুটি ৩ কিলোমিটার চওড়া ও ৩০ কিলোমিটার লম্বা ছিল৷
মহাকাব্য
এও বলছে, সেতুর প্রতিটি পাথরে লেখা ছিল রামচন্দ্রের নাম৷ সেই কারণে
পাথরগুলো ডোবেনি৷ কিন্তু বৈজ্ঞানিকদের মতে নল জানতেন সমুদ্রে কোন কোন পাথর
ভাসতে পারে৷ সেই পাথরগুলো দিয়েই সেতু বানিয়েছিলেন তিনি৷ সেই সঙ্গে তিনি
এও খেয়াল রেখেছিলেন ওই পাথরগুলো যাতে অন্য পাথরকে ভেসে থাকতে সাহায্য করে৷
দক্ষিণ ভারতের রামেশ্বরম থেকে শুরু করে
উত্তর শ্রীলঙ্কার মান্নান দ্বীপ পর্যন্ত পৌঁছেছে৷ কিন্তু শুরু হওয়ার পর
কিছুদূর গিয়েই এটি সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে৷ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত
রামেশ্বরমের কাছে পর্যটকরা এমন কিছু পাথর পেয়েছিলেন যেগুলিকে পিউমিস স্টোন
বলে৷ অনেকে মনে করেন, সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে এই পাথর তীরে এসে পৌঁছেছে৷ পরে
লোকের মধ্যে গুজব ছড়ায় এগুলি ত্রেতা যুগের সেই পাথর যেগুলির সাহায্যে
রামচন্দ্র সেতু বানিয়েছিলেন৷
তবে এই পিউমিস স্টোনের সিদ্ধান্ত যে
সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছে, এমন নয়৷ বৈজ্ঞানিকদের মধ্যেই এই নিয়ে মতভেদ
রয়েছে৷ প্রশ্ন থাকছে কিন্তু যেখানে রামসেতু নির্মাণ হয়েছে, তার অনেক দূর
পর্যন্ত কোনও আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব নেই৷ তাহলে সেই পাথরগুলো এল কোথা থেকে?
0 মন্তব্যসমূহ