
সন ১৯৯২। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জেরে উত্তাল গোটা ভারতবর্ষ। প্রতিক্রিয়া
স্বরূপ অসংখ্য হিন্দু মন্দিরের ওপর হামলা চলে পড়শি দেশ পাকিস্তানে। তার
ফলেই আংশিক জখম হয় সেদেশের শিয়ালকোট শহরের সুপ্রাচীন এক মন্দির। অবশ্য
মন্দিরে পুজো-আচ্চা বন্ধ হয়ে যায় সেই দেশভাগের সময়েই, ১৯৪৭ সালে।
এবার ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশভাগের পর প্রথমবার পুজোর জন্য
মন্দির খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পাকিস্তান সরকার। আধিকারিকরা জানিয়েছেন,
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি মেনেই খুলে দেওয়া হলো প্রায় হাজার বছরের
পুরনো এই মন্দির।
নাম, শাওয়ালা তেজা সিং মন্দির, অবস্থান, শিয়ালকোটের ঘিঞ্জি ধারোওয়াল
এলাকায়। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর থেকে প্রায় ১০০ কিমি
দূরে এই শহর। প্রয়াত ঐতিহাসিক রশিদ নিয়াজ তাঁর ‘হিস্টরি অফ শিয়ালকোট’ বইতে
লেখেন, শাওয়ালা তেজা সিং মন্দিরের বয়স হাজার বছরেরও বেশি।
উদ্বাস্তু
ট্রাস্ট প্রপার্টি বোর্ডের মুখপাত্র আমির হাশমি সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে
জানিয়েছেন, “পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের
দায়িত্বে রয়েছে উদ্বাস্তু ট্রাস্ট প্রপার্টি বোর্ড। স্থানীয় হিন্দুদের দাবি
মেনেই দেশভাগের পর এই প্রথম তেজা সিং মন্দির খুলে দিয়েছে বোর্ড।” হাশমি
আরও জানিয়েছেন, এর আগে শহরে হিন্দুদের বসবাস না থাকায় মন্দিরে পুজোরও
প্রয়োজন হয় নি।
হাশমির কথায়, “১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের ঘটনার পর এখানকার কিছু মন্দিরে
হামলা হয়, সেসময় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই মন্দিরও।” সম্প্রতি উদ্বাস্তু
ট্রাস্ট প্রপার্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাঃ আমির আহমেদের নির্দেশে মন্দির
মেরামত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রপার্টি বোর্ডের উপ-অধিকর্তা
ফারাজ আব্বাস পিটিআই-কে জানান, মন্দির মেরামতির কাজ এখনও চলছে, যদিও
শিগগিরি তা সম্পন্ন করবে বোর্ড।
আব্বাস বলেন, “পার্টিশনের পর এই
প্রথম খুলল মন্দির। এলাকায় বর্তমানে আন্দাজ ২,০০০ জন হিন্দু বাস করেন, এবং
তাঁদের এত পুরনো মন্দিরে আবার যেতে পেরে খুবই খুশি তাঁরা। এখন যথেষ্ট
পরিমাণে হিন্দুরা মন্দিরে যাচ্ছেন। আশা এই যে দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও
হিন্দুরা আসবেন মন্দিরে।” আব্বাস একথাও জানিয়েছেন যে ভারত থেকে কেউ এলেও
তাঁদের মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে।
স্থানীয় হিন্দু নেতা রতন লাল এবং রুমাইশ কুমার মন্দির মেরামত করে হিন্দুদের জন্য খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে হিন্দুরা সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সরকারি
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাকিস্তানে বাস করেন আনুমানিক ৭৫ লক্ষ হিন্দু। কিন্তু
হিন্দুদের নিজেদের হিসেব অনুযায়ী, পাকিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা ৯০ লক্ষের
বেশি। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই সিন্ধ জেলার বাসিন্দা, যেখানকার মুসলমানদের
সঙ্গে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভাষাগত মিল রয়েছে তাঁদের।
0 মন্তব্যসমূহ