
আভাস মিলেছিল শনিবারই। সংশয় ও উদ্বেগ দুইই ছিল। আগের যে কোনও একুশে
জুলাইয়ের সঙ্গে এবারের একুশে জুলাই যেন একটু ভিন্ন তালে চলেছে। দলনেত্রীর
বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের রসদ পাবেন, এমনটাই আশা করেছিলেন তৃণমূল
কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। তবে তাঁদের চোখ-মুখই বলে দিচ্ছে, যে দলনেত্রীর সেই
বার্তাতেই কোথাও যেন তাল কেটেছে। উল্লেখ্য, এবার একুশের মঞ্চে তৃণমূলে
কোনও যোগদান পর্ব হল না।বরাবরই একুশে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়কে অক্সিজেন জুগিয়ে এসেছে। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করার
অন্যতম হাতিয়ার ছিল শহিদ দিবস। মমতার ঝাঁঝালো বক্তব্য শুনতে আসতেন তৃণমূল
কর্মী-সমর্থকরা। মঞ্চের সামনে ও বাঁ দিকে ঠাসাঠাসি করে লোক বসতো। এক পা
এগোনোর জায়গা থাকতো না। প্রতিটি একুশে জুলাইয়ের সভায় ঘোষণা করা হত সামনের
দিকে ঠেলবেন না। বিপদ হতে পারে। এবার আর সেই ঘোষণাও নেই। তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, ‘‘অন্য বারের থেকে লোক বেশি হয়েছে। আসার সময় রেড রোডে দেখলাম ২
লক্ষ লোক দাঁড়িয়ে আছে’’।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই বরাবর সাংগঠনিক বার্তা
দিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মঞ্চ থেকেই দলের আগাম কর্মসূচি ঘোষণা
করেন দলনেত্রী। এবারও ঘোষণা করেছেন। বামফ্রণ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন
গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই শহিদ মঞ্চকে বেছে নিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুধু
২০১১-এর শহিদ দিবস পালন করা হয়েছিল ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। কিন্তু ২১
জুলাই মানেই ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউস। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
চলাকালীন যে ভাবে মঞ্চের সামনে অবধি কর্মী-সমর্থকরা অবাধে যাতায়াত করেছেন,
সেই দৃশ্য আগেক কোনও একুশে জুলাইয়ের সভায় প্রত্যক্ষ করা যায়নি। তাঁর
বক্তব্যকেও যেন অনেকটা হালকা মেজাজেই নিয়েছেন হাজির দলীয় কর্মীরা।
সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন আরও
ভিড় হয়নি। কখনও বা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এদিনের শহিদ দিবসে লক্ষ
লক্ষ মানুষ এসেছেন। মমতার স্বতঃপ্রণোদিত এত ব্যাখ্যাই প্রশ্ন তুলছে তাঁর
আত্মবিশ্বাস নিয়ে। নেত্রী তুলনা করেছেন ব্রিগেড সমাবেশের সঙ্গে। কী বলেছেন
মমতা? তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেক জায়গায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হুগলির গুড়াপে বাস দাঁড় করিয়ে কর্মী-সমর্থকদের নামিয়ে মারধর করা হয়েছে।
পটাশপুরেও ঝামেলা করা হয়েছে’’। মমতার দাবি, ‘‘এবারের সভা আগের থেকেও বড়
হয়েছে। চারিদিকে লোক। বাইরে লক্ষ লক্ষ লোক। চিন্তা করার কোনও কারণ নেই’’।
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকতো তাহলে এত লোক এলো
কোত্থেকে?’’ অন্য কোনও ২১ জুলাইয়ে মমতাকে বলতে শোনা যায়নি, ‘‘চিন্তা করার
কোনও কারণ নেই’’। সবমিলিয়ে এই ২১ জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা সত্যিই কি তৃণমূলের
চিন্তা না করার মতো? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।
0 মন্তব্যসমূহ