
যাঁর ঘুষ সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে গত বছর দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-এ গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায় দুই কর্তার মধ্যে,
হায়দরাবাদের সেই ব্যবসায়ী সানা সতীশ বাবুকে শুক্রবার দিল্লিতে গ্রেফতার
করল ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। আধিকারিকরা একথা জানিয়েছেন শনিবার।
বিতর্কিত মাংস রপ্তানিকারী মোইন কুরেশি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ইডি-র দায়ের
করা অর্থ পাচার মামলার প্রেক্ষিতে ওই ঘুষের অভিযোগ আনেন সতীশ বাবু।
এর আগে সতীশকে এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে তলব করে ইডি, কিন্তু তাঁর
গ্রেফতারির পর এখন তিনি অভিযুক্ত। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা জানিয়েছেন,
শুক্রবার গভীর রাতে প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের আওতায় গ্রেফতার
করা হয় তাঁকে। এর আগে সতীশকে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, কিন্তু তিনি
“সহযোগিতা না করায়” তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
কুরেশির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এবং দুজনের মধ্যে আর্থিক লেনদেনকে আপাতত
সন্দেহের চোখে দেখছে ইডি, যার ফলে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে
সতীশকে।
সূত্রের খবর, ঘুষ মামলায় জড়িত সতীশ, এবং কুরেশিকে অবৈধভাবে টাকা দিয়েছেন
তিনি। শনিবার দিল্লির এক বিশেষ আদালতে সতীশকে হাজির করে হেফাজতের মেয়াদ
বাড়ানোর আবেদন করেছে ইডি।
উল্লেখ্য, সতীশের অভিযোগের ভিত্তিতেই গত
বছর সিবিআই-এর তরফে এফআইআর দায়ের করা হয় সংস্থারই বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ
আস্থানার বিরুদ্ধে, যে সময় তুঙ্গে ওঠে তৎকালীন সিবিআই অধিকর্তা অলোক ভার্মা
এবং বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানার কুখ্যাত অন্তরদ্বন্দ্ব। ফৌজদারি
কার্যবিধি বা ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোডের ১৬৪ ধারার অধীনে ম্যাজিস্ট্রেটের
সামনে বয়ান রেকর্ড করেন সতীশ, যার পর আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে
সিবিআই।
সিবিআই-কে দেওয়া তাঁর বয়ানে সতীশ বলেন, আস্থানাকে তিনি দু কোটি টাকা ঘুষ
দেন যাতে কুরেশি কাণ্ডে তাঁকে না জড়ানো হয়। ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে শুরু করে
দশ মাস ধরে এই টাকা আস্থানাকে দেওয়া হয়। সেসময় সতীশের কার্যকলাপের তদন্ত
করছিল আস্থানার নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষ তদন্তকারী দল।
সতীশের অভিযোগের সারবত্তা বিচার করে এফআইআর দায়ের হয় আস্থানা এবং আরও
কিছু সিবিআই আধিকারিকের বিরুদ্ধে। জবাবে আস্থানা পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ
আনেন অলোক ভার্মার বিরুদ্ধেও, এবং সতীশের বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্তকারী দলকে
পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছেন না ভার্মা, এই মর্মে অভিযোগ নথিভুক্ত করেন।
সরকারি সূত্রে খবর, গত বছরের ২৪ অগাস্ট ক্যাবিনেট সচিবকে একটি দীর্ঘ
চিঠি লিখে ভার্মার দুর্নীতির ১০ টি উদাহরণের তালিকা পেশ করেন আস্থানা।
চিঠিতে বলা হয়, মামলায় ক্লিন চিট পাওয়ার জন্য সিবিআই প্রধান
অর্থাৎ ভার্মাকে দু কোটি টাকা দিয়েছেন সতীশ। বলা বাহুল্য, আস্থানা
এবং ভার্মা দুজনেই তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এসবেরই সূত্রপাত ২০১৭ সালে, যখন অর্থ পাচার-বিরোধী আইনের অধীনে কুরেশির
বিরুদ্ধে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে চক্রান্ত করে দুর্নীতি করার অভিযোগে
ফৌজদারি মামলা রুজু করে ইডি। তদন্ত চলাকালীন কুরেশিকে গ্রেফতার করে ইডি,
এবং তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সিবিআই-এর আরেক প্রাক্তন অধিকর্তা এ পি
সিংয়ের বিরুদ্ধেও এই ঘটনায় তদন্ত চালাচ্ছে ইডি।
0 মন্তব্যসমূহ