
ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বহিঃ রাজ্যে নারী পাচার কান্ড নতুন কোনো বিষয় নয়।
একের পর এক রাজ্যের মেয়ে থেকে শুরু করে নারীরাও যে অর্থের বিনিময়ে পাচার ও
প্রেমের ফাঁদে পড়ে বহিঃ রাজ্যে বিবাহ হয়েছে তার নজির ভুরি ভুরি রয়েছে। আর তাতে
এক শ্রেণীর দালাল চক্র রাজ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলছে।
এরকমই একটি ঘটনা ঘটল
কদমতলা থানা দিন কালা গাঙ্গের পাড় গ্রামে। ওই গ্রামের 5 নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা
সাজেদা বেগম (পরিকল্পিত নাম) অপর বিতরগুল গ্রামের এক নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রশিদ
আলী সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয়। আর সেই সুবাদে
আজ থেকে দুই বছর পূর্বে কালাগাঙ্গের পার স্থিত নিজ বাড়ি থেকে কদমতলা আসার
পথে সাজিদা কে রশিদ আলী নিজের অটোতে তুলে নিয়ে আসে। আর তখনই ঘটে চরম বিপত্তি।
বহিঃ রাজ্যের রাজস্থানে বিক্রি হওয়া সাজেদা বেগম জানান তখন ওই দালাল অটোচালক
রাশিদ আলী ওরফে বটুল তাকে একটি পান খাওয়ার জন্য দেয়। ওই মহিলা ও নিঃসন্দেহে
পানটি খেয়ে নেয়। আর ওই এক পান খেয়েই
তিনি দিল্লি চলে যান। দিল্লি গিয়ে যখন উনার জ্ঞান ফিরে তখন দেখতে পান দুজন
অপরিচিত হিন্দি ভাষী লোক তাকে ধরে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।তখন তিনি
চিৎকার চেচামেচি করলে ওই হিন্দিভাষী লোকজন বলে আমরা 1 লক্ষ 70 হাজার টাকার বিনিময়ে তোমাকে ক্রয় করে নিয়েছি। দরিদ্র গ্রাম্য
স্বামীহীন ওই মহিলা তিন সন্তানের জননী রাশিদা বেগম হতভম্ব হয়ে মাটিতে লুটিয়ে
পড়েন। তিনি যখন ওই অপরিচিত যুবকদের বলেন
কি করে দিল্লিতে তিনি আসলেন তখন উত্তরে ওই দুই যুবক বলে মোটা অর্থের
বিনিময়ে তোমাকে তোমার ভাই রশিদ আলীর কাছ থেকে ক্রয় করে আমরা সেখানে নিয়ে আসি
বিবাহ করব বলে। অথচ ওই মহিলার কদমতলা স্থিত নিজ বাড়িতে তিনটি সন্তান রয়েছে।
সেই
সব কথা উপেক্ষা করেও সেখানে এক ব্যক্তি তাকে বলপূর্বক বিবাহ করে দু বছর সেখানে
রেখে একটি সন্তান জন্ম দিয়ে ও চরম অশান্তি ও দুর্ব্যবহার করে। কিন্তু অপহৃতা
রাশিদা যখন বাড়িতে ফেরার জন্য মন আকুল হয়ে ওঠে তখন ওই ওরা তাকে মারধর করতে
থাকে।এভাবে যখন দুটি বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায় তখন হঠাৎ বাড়িতে ফেরার জন্য আকুল
হওয়ায় তাকে কয়েকজন মিলে মারধর করে আহত করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।
আর সেখান থেকেই সকলের অদৃশ্যে ওই মহিলা পালিয়ে যায়। সুদূর রাজস্থানের রিনজা খানি
গ্রাম থেকে পালিয়ে অজানা ট্রেনে উঠে এক সপ্তাহ পূর্বে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করতে
করতে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। রাত এগারোটা নাগাদ কদমতলা তে এসেই তিনি প্রথমে
অপহরণকারী রাশিদ আলীর বিরুদ্ধে কদমতলা থানায় লিখিত একটি মামলা করে বাড়ি যান।
ঘটনার দু তিন দিন হয়ে গেলেও কদমতলা থানার
পুলিশ অপরাধী রে গ্রেফতার না করে উল্টো মহিলাকে চরিত্রহীন এবং অর্থের বিনিময়ে
যাওয়ার জন্য অপমানিত করেন। তাছাড়া মামলাটি তুলে নেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
কিন্তু নির্যাতিতা রাশিদা সেই বিষয়ে কান না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে তিন
দিন পর অপহরণকারী রাশিদ আলী ওরফে বটুলকে কদমতলা এলাকাবাসীর সহযোগিতায় থানায়
নিয়ে যান।
বর্তমানে অপহরণকারী ওই দালাল রাশিদ আলী কদমতলা থানার গারদে রয়েছে।
আগামীকাল তাকে জেলা আদালতে সোপর্দ করা হবে। সেই বিষয়ে কদমতলা থানায় ৩৬/১৯নম্বরে
মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতা রাশিদা বেগম। বর্তমানে কদমতলা থানার পুলিশ তদন্ত
শুরু করছে অপরাধীর বিরুদ্ধে। এদিকে অপরাধী তথা দালাল রাশিদ আলী এলাকায় ত্রাস
সৃষ্টিকারী একজন ব্যক্তি বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে কদমতলা
থানায়। অপরাধের চরম সীমানায় পৌঁছে নিজেকে সমাজের কুকর্মে নিজেকে লিপ্ত করেছে।
এখন দেখার তার বিরুদ্ধে কি আইনি সাজা অপেক্ষা করে।
0 মন্তব্যসমূহ