
“জনতার উদ্দেশে: পরিযায়ী শ্রমিকদের শোষণ রুখতে, সমস্ত পাবলিক এবং
ঠিকাদার সমিতি সমবেতভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং অনুরোধ জানানো হচ্ছে
যেন এই শ্রমিকদের নিম্নলিখিত মজুরিতেই নিযুক্ত করা হয়। মিস্ত্রি: ৭৫০ থেকে
৮০০ টাকা। হেল্পার: ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। শুধুমাত্র এই মজুরিতে কাজ করতে
ইচ্ছুক শ্রমিকরাই এখানে থাকতে পারবেন।”
এই মর্মে লেখা মালয়ালম, বাংলা, এবং তামিল ভাষায় একাধিক পোস্টার ছড়িয়ে
পড়েছে কেরালার এরনাকুলাম জেলার মুভাত্তুপুড়া শহরে, যেখানে বাস কয়েকশো
ভিনরাজ্যের শ্রমিকের। একনজরে পোস্টারগুলি দেখলে মনে হয়, কী আর এমন? কিন্তু
সমাজকর্মীরা বলছেন, এই বার্তার ছত্রে ছত্রে রয়েছে প্রচ্ছন্ন, অথচ সুস্পষ্ট,
হুঁশিয়ারি। তাঁদের মতে, এই ধরনের বেনামী পোস্টারের মাধ্যমে ঠিকাদার এবং
তাঁদের এজেন্টরা নিজেদের ইচ্ছামত বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করছেন পরিযায়ী
শ্রমিকদের মজুরি, বিশেষ করে নির্মাণশিল্পের ক্ষেত্রে, রাজ্যের শ্রম দফতরের
সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই।
শুধু তাই নয়, পোস্টারে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যাঁরা এই নির্দিষ্ট মজুরিতে
কাজ করতে অনিচ্ছুক, তাঁরা রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে পারেন। “বর্তমানে
মিস্ত্রিদের দৈনিক মজুরি আন্দাজ ৯৫০ টাকা, হেল্পারদের ৭৫০ টাকা। কাজেই
ঠিকাদার বা তাদের এজেন্টরা চেষ্টা করছে যাতে এই মজুরি কমানো যায়। এই
পোস্টারগুলি অপরাধমূলক। সাদা কথায়, পরিযায়ী শ্রমিকদের বলা হচ্ছে, এই
মজুরিতে না পোষালে এখানে থাকার কোনও অধিকার নেই,” বলেন পিপলস ইউনিয়ন ফর
জাস্টিস (পিইউজে)-এর কোঅরডিনেটর জর্জ ম্যাথু।
পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা, তামিল নাড়ু এবং বিহারের মতো রাজ্য থেকে প্রায়
৩৪ লক্ষ মানুষ কেরালার অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকের কাজ করেন। দেশজুড়ে এই
ধরনের শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি দৈনিক মজুরি দেওয়া হয় কেরালাতেই। প্লাইউড
কারখানা থেকে শুরু করে কাজুবাদাম, জুতো, বস্ত্র, এবং হোটেল শিল্পের মতো
রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের এই শ্রমিকরা হলেন স্তম্ভ। কিন্তু ম্যাথু
জানাচ্ছেন, স্থানীয়দের হাতে মজুরি নিয়ে হেনস্থা এবং প্রতারণার শিকার হয়েছেন
তাঁরা।
বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার পড়ার পর ম্যাথু পিইউজে-র তরফে রাজ্যের
শ্রমমন্ত্রী টি পি রামকৃষ্ণনকে চিঠি লেখেন। জেলা শ্রম দফতর এবং স্থানীয়
পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। “যেসব এজেন্ট কোনোরকম শ্রম আইন না মেনেই
নির্বিচারে শ্রমিক নিয়োগ করেন, তাঁদের এভাবে একতরফা মজুরি বেঁধে দেওয়ার
কোনও অধিকার নেই। এভাবে পোস্টার দেওয়া বেআইনি। একতরফা শ্রমিকদের মজুরি ঠিক
করে ফেলা, তাঁদের বলা যে তাঁরা যেসব জায়গায় দাঁড়িয়ে বছরের পর বছর কাজ পেয়ে
এসেছেন সেসব জায়গায় আর জড়ো হতে পারবেন না, এবং মতের অমিল দেখলে আক্রমণ করা,
এসবকিছুতে ক্রীতদাস প্রথার ইঙ্গিত পাওয়া যায়,” বলছে চিঠির বয়ানের একাংশ।
মুভাত্তুপুড়ার ইন্সপেক্টর নির্মল বোস স্বীকার করেছেন যে তিনি পোস্টার
সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “পোস্টার সমেত দু-একটি ফ্লেক্স
বোর্ড পাওয়া গেছে। আমরা অনুসন্ধান করেছিলাম, কিন্তু কে বা কারা ওই পোস্টার
লাগিয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারি নি। যাই হোক, পুরসভাকে বলা হয়েছে সব পোস্টার
সরিয়ে ফেলতে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা যে শ্রমিক হেনস্থার খুব বেশি অভিযোগ
পাই এমন নয়। মাঝেমাঝে এমন কোনও ঘটনার কথা জানতে পারলে চেষ্টা করি হস্তক্ষেপ
করে সমাধান করার।”
0 মন্তব্যসমূহ