
ভুল হয়ে গেছে বিলকুল। তৃণমূলের ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে ৩০মে নৈহাটি থেকে
হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “১৪ তারিখ কাঁচরাপাড়ার কাচরা হঠাতে বীজপুরে আসব”।
কথা রেখে এদিন কাঁচরাপাড়ায় এলেন তৃণমূলনেত্রী। ব্লক স্তরের সাংগঠনিক সভার
সেই মঞ্চ থেকেই ‘কাচরা’দের উদ্দেশে যেমন হুঙ্কার যেমন ছাড়লেন, তেমনই ভুলও
স্বীকার করলেন মমতা। এদিন নাম না করে মুকুল-শুভ্রাংশু-অর্জুন সিংদের একযোগে
বিধেঁছেন মমতা। একদা ‘দক্ষিণ হস্ত’ মুকুলের নাম উহ্য রেখেই এদিন মমতা
বলেন, “আমায় দলের নেতারা বারবার বলত দিদি ও গদ্দার, তুমি সাবধানে থেকো।
কিন্তু তখন আমি তাঁদের কথা শুনিনি এটা আমার প্রথম ভুল। মানবিক হয়ে সেই কথা
বিশ্বাস করিনি। ভুল করেছি। স্বীকার করে নিচ্ছি”। নেত্রীর এই বক্তব্যের পরেই
সভার মধ্য থেকে আওয়াজ ওঠে, “দিদি এরপর ওরা এলে আর নেবেন না”? তৃণমূল
নেত্রীর ঝটিতি জবাব “আর নেওয়ার কোনও প্রশ্নও নেই”।
প্রসঙ্গত, লোকসভা
নির্বাচনের আগেই তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন কাঁচরাপাড়ার
‘ভূমিপুত্র’ মুকুল রায়। মুকুলের পথ অনুসরণ করে তাঁরই মধ্যস্থতায় তৃণমূল
ছেড়ে একে একে বিজেপিতে চলে যান অর্জুন, শুভ্রাংশুও। এমনকী একদা তৃণমূল
‘ঘাঁটি’ ব্যারাকপুরেও ভোটে জেতে গেরুয়া শিবির। শিল্পাঞ্চল জুড়ে এখন ক্রমশ
শক্তি বৃদ্ধি করছে বিজেপি। আর এলাকায় বিজেপি যত বাড়ছে, ততই কোণঠাসা হচ্ছে
তৃণমূলীরা। তৃণমূল ভাঙিয়ে বিজেপির ঘর গোছানোর যে নজির সম্প্রতি মুকুল গড়ে
চলেছেন, সে বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। তাঁর সাফ কথা, আগামী সাত
দিনের মধ্যে যারা যারা দল ছাড়তে চায়, তারা ছেড়ে দিক। এরপরই নাম না করে ফের
মুকুল-অর্জুনদের কটাক্ষের করে মমতা বলেন, ” আগে তো কেউ কেউ এখানে রেলের
ছোটোখাটো ঠিকাদারি করতো। আর এখন দুবাই থাইল্যান্ড যাচ্ছে। বাংলার ভোটার
লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে সব দিল্লির ভোটার হয়েছে, দেখবো কত দম”! এখানেই
থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপিকে ‘দাতাকর্ণ’ বলেও বিঁধেছেন তিনি।
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “ওরা ক্রিমিনালদের টাকা দিচ্ছে। ক্লাবে গিয়ে
মহল্লাতে গিয়ে টাকা দিচ্ছে। আপনারা ভয় পাবেন না”। এদিন ঘাসফুল শিবিরের
কর্মীদের মনোবল বাড়াতে তিনি বলেন, “আমার দলের লোকেরা ভিতু নয়, পাল্টা দিতে
জানে। কিন্তু আমি বলব, মাথা ঠান্ডা করে কাজ করুন”। বর্তমানে মুকুলের হাত
ধরে একাধিক তৃণমূল নেতা-বিধায়কদের পদ্ম শিবিরে যোগদান যে তৃণমূল নেত্রীর
কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া করছে তা বলাই বাহুল্য।
উল্লেখ্য, একদা বাম গড়
হিসাবে পরিচিত এই জেলা ২০১১ থেকে সবুজে রেঙে উঠেছিল। তবে লোকসভার ফল ঘোষণার
পর দেশের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার জেলার দুটি কেন্দ্রে পদ্ম ফুটেছে। মুকুল
রায়ের হাত ধরে অর্জুন সিং-এর বিজেপিতে যোগদান, লোকসভায় হার, নির্বাচন
পরবর্তী হিংসায় দলীয় কর্মীদের ঘরছাড়া হওয়ার ঘটনায় রীতিমতো রাতের ঘুম উড়েছে
তৃণমূলের। এমতাবস্থায় মুকুল-অর্জুনদের ঘরের মাঠে দাঁড়িয়ে তাদের হুঙ্কার
দিয়ে কার্যত তৃণমূলকর্মীদের মনোবল দিলেন নেত্রী, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল
মহল।
0 মন্তব্যসমূহ