
অসম পুলিশের সীমান্ত শাখার প্রাক্তন সাব ইন্সপেক্টর চন্দ্রমল দাসের
বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল। বাহিনীর পক্ষ থেকে ভারতে বসবাসকারী সন্দেহভাজন
অবৈধ বিদেশীদের সনাক্তকরণের কাজে পর্যবেক্ষণকারী হিসাবে দীর্ঘকাল নিযুক্ত
ছিলেন তিনি। ২০০৮-০৯ সালে তাঁর তৈরি একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে ‘বিদেশি’ তকমা
দিয়ে গ্রেফতার করা হয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মহম্মদ
সানাউল্লাহকে। এই ঘটনা সামনে আসতেই দেশজুড়ে সেনাবাহিনীর নিয়োগ প্রক্রিয়া
নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া মেলে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তৈরি একটি রিপোর্টে
চন্দ্রমল তিনজনের নাম সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু ওই তিনি সাক্ষী
পুলিশের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, তাঁরা বিবৃতি দেননি এবং তাঁদের সই জাল করা
হয়েছিল। এরপরই বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত চন্দ্রমল দাসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের
হয়।
অসম পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “বোকো থানার
রিপোর্ট অনুযায়ী তিন সাক্ষীই চন্দ্রমল দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন
এবং তাঁরা জানান, সাক্ষী হিসেবে চন্দ্রমল তাঁদের কোনও বিবৃতি নথিভুক্ত
করেননি। এমনকি রিপোর্টে যে সই আছে তাও জাল করা হয়েছে”।
উল্লেখ্য, তিরিশ
বছরের ধরে দেশের সেবা করা বছর বাহান্নর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন
সুবেদার তথা বর্তমানে অসম বর্ডার পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মহম্মদ
সানাউল্লাহকে ‘বিদেশি’ তকমায় দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। ১৯৮৭ থেকে
২০১৪ পর্যন্ত সুদীর্ঘ কর্মজীবনে সেনাকর্মী হিসাবে জম্মু-কাশ্মীর সহ উত্তর
ভারতের একাধিক অশান্ত এলাকায় কাজ করেছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই
সানাউল্লাহ। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে ২০১৭ সালে যোগ্যতার প্রমাণ
দিয়ে তিনি কামরুপ জেলায় অসম বর্ডার পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর পদে যোগ দেন।
এরপরই উপরিউক্ত তিন সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে (‘রেফারেন্স মামলা’) ২০০৮-০৯
সালে সন্দেহজনক অবৈধ বিদেশি হিসাবে সানাউল্লাহকে সনাক্ত করে ফরেনার
ট্রাইবুন্যালে পাঠায় চন্দ্রমল দাস।
সানাউল্লাহ মামলা এভাবে চললেও
বর্তমানে সাক্ষীদের বয়ান সামনে আসায় ঘটনাটির মোড় ঘুরে যায়। দেখা যায়,
চন্দ্রমল দাসের রিপোর্টে যে তিনজন ব্যক্তির উল্লেখ ছিল তাঁরা হলেন বোকো
পুলিশ থানার কলাইকাশ গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ আলি, মহম্মদ কুরান আলি এবং
মহাম্মদ সোহাবন আলি। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই তিনজন ওই এলাকার স্থায়ী
বাসিন্দা হলেও সানাউল্লাহ তাঁদের গ্রামের বাসিন্দা নয়, এমনকি সানাউল্লাহের
নাগারিকত্ব নিয়েও তাঁরা কিছু জানে না। কিন্তু রবিবার বোকো থানায় আমজাদ,
কুরান, সোহবান আলিরা চন্দ্রমল দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করে জানান,
তাঁদের সম্মতি না নিয়েই নাম ব্যবহার করে একটি মিথ্যে রিপোর্ট তৈরি করা
হয়েছে। এমনকি তাঁদের যে সই রিপোর্টে আছে, সেগুলিও ভুয়ো।
কয়েকদিন আগেই অসমের গোয়ালপাড়া জেলাডিটেনশন ক্যাম্পে অসম বর্ডার
পুলিশের পক্ষ থেকে সানাউল্লাহকে পাঠানো হয় এবং ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে এই
মামলা ঘিরে ওঠে প্রশ্ন। সেখানে বলা হয়, ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৪৬ অনুযায়ী একজন
ব্যক্তি বিদেশি কি না সে ব্যাপারে ওঠা প্রশ্নের যথার্থ মতামত প্রদান করতে
হবে”।
বছর পয়ষট্টির কুরান আলি ( চন্দ্রমল দাসের রিপোর্টে উল্লেখিত
সাক্ষীদের একজন) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “আমি এই চন্দ্রমল দাসকে চিনি
না। ১৯৮১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কর্মসূত্রে আমি গুয়াহাটিতে ছিলাম। সেখানে
সানাউল্লাহর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। পুরো রিপোর্টটাই বানানো। আমি সানাউল্লাহ
এবং ওর পরিবারকে বহুবছর ধরে চিনি। আমার বাড়ির কাছেই এঁদের বাড়ি”। এমনকি গত
সপ্তাহে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সানাউল্লাহের পরিবার এবং আইনজীবিরা
জানিয়েছিল, পুলিশের তরফ থেকে সানাউল্লাহের যে বিবৃতি নেওয়া হয়েছে তা
সম্পূর্ন মিথ্যা দিয়ে সাজানো। কারণ সেখানে সানাউল্লাহ বলছেন, তিনি
বাংলাদেশের কাশিমপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। এমনকি নিজেকে অশিক্ষিত বলেও
উল্লেখ করেন তিনি এবং ভারতে একবারও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেননি বলেও
দাবি জানান। তবে এসবই অসত্য বলে পরিবারের দাবি।
প্রসঙ্গত, যাঁকে ঘিরে এই
মুহূর্তে ঘটনার মোড় ঘুরেছে, সেই চন্দ্রমল দাস বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। তাঁর
সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু একটি লোকাল টেলিভিশন চ্যানেলের
সাক্ষাৎকারে তাঁকে দেখা যায়। তবে সাক্ষাৎকার পর্বে তিনি ক্যামেরার দিকে
পিছন ফিরে ছিলেন। সেখানে তিনি বলেন ” রিপোর্টটি আমি লিখেছিলাম। কিন্তু যার
বিরুদ্ধে লিখেছিলাম তিনি এই সানাউল্লাহ নন। যাকে গ্রেফতাঁর করা হয়েছে তিনি
আর যে ব্যাক্তির সই নেওয়া আছে তাঁরা দুজনে এক ব্যাক্তি নন। এই সানাউল্লাহকে
আমি চিনি না”।
0 মন্তব্যসমূহ