
বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের কারণে ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে ফের ভোট নেওয়ার দাবি
জানাল কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন দিল্লিতে কমিশনের কাছে
মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে। ওই আসনে ভোট হয়েছে গত ১১ এপ্রিল। তাতে কারচুপি এবং
ভোটদানে বাধা দেওয়ার ঘটনাগুলি নিয়ে রিপোর্টই দেননি নির্বাচনী কাজে নিযুক্ত
সরকারি কর্মীরা। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন
রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক সন্দীপ এন মাহাত্মে। এর আগে তিনি পোলিং
এজেন্ট এবং যারা ভোটদানে বাধা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ
দিয়েছিলেন। গত কাল রাতে তিনি প্রিসাইডিং অফিসার এবং মাইক্রো অবজারভার-সহ
অন্যান্য সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন। আজ তাঁদের কয়েক
জনকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়। তাঁরা জামিন পেয়েছেন। উদয়পুরের মহকুমা
পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, কাকড়াবন থানা এলাকায় বিজেপির দু’জন পোলিং
এজেন্টকেও গ্রেফতার করা হয় এ দিন। জামিন পেয়েছেন তাঁরাও।
কংগ্রেস ও বামেরা ভোটের পর থেকেই বলে আসছেন, বিজেপির এজেন্টরা
ভোটারদের বাধা দিয়েছেন, লাইন থেকে বার করে দিয়েছেন এবং ছাপ্পা ভোট দিয়েছেন।
বিজেপির পক্ষে রাজ্যের আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ দাবি করেন, বিরোধী দলগুলি
কমিশনকে বিভ্রান্ত করছে। বিজেপির প্রার্থী প্রতিমা ভৌমিক কমিশনকে ‘বেকুব’
বলতেও ছাড়েননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলগুলির পক্ষে
কাজ করেছে।
কংগ্রেস অবশ্য আজ ঠিক উল্টো অভিযোগই এনেছে। রাজ্য কংগ্রেসের সহসভাপতি
পীযূষ বিশ্বাস ও দলের অন্য নেতারা এ দিন দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে
গিয়ে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর কাছে
অভিযোগ জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশন দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে অসত্য তথ্য
জমা দিয়েছে।
ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে তাই ফের ভোট নেওয়া হোক। পীযূষবাবু ফোনে
বলেন, ‘‘ত্রিপুরার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন জানান,
১১ তারিখে ভোট হওয়ার পরে ১৩ তারিখ সমস্ত দলীয় প্রার্থী ও এজেন্টদের সামনেই
সিসি ক্যামেরা ও ভিডিয়ো ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়েছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন
রিপোর্ট পাঠিয়েছে। শুনে আমরা থ! যেখানে গেলামই না, সেখানে হাজির ছিলাম বলে
রিপোর্ট পাঠিয়ে দিল কমিশন! এটা কী করে সম্ভব? কমিশন ডেকে থাকলে তার প্রমাণ
তো থাকবে!’’
পীষূষবাবু যোগ করেন, ‘‘বিজেপি ও সরকারি আধিকারিকরা যে ত্রিপুরায়
লোকসভা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে, তার প্রমাণ পেলাম আজ। রাজ্য
নির্বাচন কমিশন পুরো মিথ্যা রিপোর্ট পাঠিয়েছে। আমরা দিল্লিতে এসে প্রমাণ
পেলাম, রাজ্য নির্বাচন কমিশন কী ভাবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে মিথ্যা
তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।’’
পীষূষবাবুদের সামনেই ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার
জৈন এ দিন রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিককে ফোন করে ‘সঠিক রিপোর্ট’ চেয়েছেন।
ত্রিপুরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার এখন জৈনের উপরে। পীষূষবাবু বলেছেন,
‘‘তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমরা সন্তুষ্ট। জাতীয় নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভাবে
কাজ করছে বলেই রাজ্য কমিশনের রিপোর্টের কথা খোলাখুলি আমাদের জানানো হয়েছে।
আশা করছি, কমিশন উপযুক্ত সিদ্ধান্তই নেবে।’’
আগামী ২৩ তারিখ
ত্রিপুরা-পূর্ব আসনে ভোট। সে দিন যাতে কোন রকম অশান্তি না হয় এবং
আধা-সামরিক বাহিনী ঠিক মতো মোতায়েন হয়, তার দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেসের
প্রতিনিধিরা। ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জৈন আশ্বাস দিয়েছেন, প্রয়োজনে পোলিং
এজেন্টদের বাড়ি থেকে আনতে কমিশন ‘এসকর্ট’ দেবে।