
সুপ্রিম কোর্টের একটি বিশেষ জরুরি অধিবেশনে ভারতের প্রধান বিচারপতি
রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে আদালতের এক প্রাক্তন কর্মীর আনা যৌন হেনস্থার অভিযোগ
সংক্রান্ত খবর কিছু অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ হওয়া নিয়ে গভীর অসন্তোষ জানাল
বিচারপতি গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ। ওই বেঞ্চের মতে, এর দ্বারা
বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশেষ অধিবেশন বসে সকাল ১০.৩৯ এ, কয়েকটি নিউজ পোর্টালে হেনস্থার
অভিযোগের খবর প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই। বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং
সঞ্জীব খান্নার সঙ্গে অধিবেশনে বসে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এ অবিশ্বাস্য।
অস্বীকার করতে গেলেও আমাকে অনেক নীচে নামতে হবে, যা আমি করতে চাই না।”
অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল এবং সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা
কোর্টে আর্জি জানান, যাতে ব্যাপারটি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। প্রধান
বিচারপতি বলেন যে এই অভিযোগের দ্বারা বিচারব্যবস্থাকে খর্ব করার প্রচেষ্টা
চলছে, এবং প্রধান বিচারপতির পদাধিকার “অচল” করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি
আরও বলেন, “বিচারব্যবস্থা অত্যন্ত গভীরভাবে বিপন্ন”।
বিচারপতি গগৈয়ের অনুমান, আগামী সপ্তাহে আদালতে বিচার্য কিছু
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসার কথা, যার ফলে বর্তমানে এই কাণ্ড ঘটছে। তাঁর
প্রশ্ন, “২০ বছর পর এই কি ভারতের প্রধান বিচারপতির প্রাপ্য পুরস্কার?” একই
সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “এই ২০ বছরের পর আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৬.৮০
লক্ষ টাকা। যে কেউ ব্যালান্স পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমার পিওনের কাছেও
এর চেয়ে বেশি টাকা রয়েছে।” তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, তিনি হাল ছেড়ে দেবেন না, এবং
অবসর নেওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের কর্তব্য পালন করে যাবেন।
বেণুগোপাল জানান, এই ধরনের আরও দুটি ঘটনার অতীত উদাহরণ রয়েছে: একবার
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, এবং
দ্বিতীয় ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন বর্ষীয়ান উকিল অভিষেক মনু সিংভি। দুবারই
অভিযোগ সংক্রান্ত কোনও খবর প্রকাশ করার থেকে বিরত রাখা হয় মিডিয়াকে। তাঁর
কথায়, “যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত বা অভিযোগকারী, কারোর
নামই প্রকাশ্যে আনা যাবে না” কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে “প্রতিবেদনটি
সম্পূর্ণ নির্লজ্জভাবে” নাম প্রকাশ করেছে।
এই আইনি আধিকারিক আরও বলেন যে তিনি নিজে পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায়
আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সহমত প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই বিশেষ
অধিবেশন আমি নিজের দায়িত্বে ডেকেছি। এই নজিরবিহীন এবং বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি
কারণ এই ঘটনা নিয়ে বড় বাড়াবাড়ি হয়েছে।” তাঁর আরও বক্তব্য,
“বিচারব্যবস্থাকে বলির পাঁঠা বানানো যাবে না।” বিচারপতি গগৈ বলেন যে আজ,
শনিবার, অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে কিছু ফৌজদারি মামলায় জামিনের আবেদনের
শুনানি হওয়ার কথা। কাকতালীয় ভাবে আজই অভিযোগ এনেছেন তিনি।
মেহতা অভিযোগকারিণীকে “বিবেকহীন” আখ্যা দেন। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে
বিচারপতি মিশ্র বলেন বিচারপতিদের বিরুদ্ধে এই ধরনের “অনৈতিক অভিযোগ” উঠলে
বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না, এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি
জনগণের আস্থার উপরেও এর প্রভাব পড়বে। বিচারপতি খান্নাও সংশয় প্রকাশ করে
বলেন, যে কোনও মামলার নিষ্পত্তি হওয়া মানেই তাতে এক পক্ষের জিত, অন্য
পক্ষের হার। কিন্তু তিনি যোগ করেন যে আদালতের কর্মীদের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ
প্রক্রিয়া রয়েছে।
বেণুগোপাল বলেন, এভাবে নিশানার মুখে পড়লে বিচারপতিদের পক্ষে কাজ করা
কঠিন হয়ে উঠবে। প্রধান বিচারপতি যোগ করেন, “কোনও বিচারপতি এরপর সিদ্ধান্ত
নেবেন না…সিদ্ধান্ত নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়…স্রেফ মুলতুবি করে দিয়ে বলবেন,
আরেকদিন আসুন।” বিচারপতি গগৈ প্রশ্ন তোলেন, “কেন কোনও সুস্থ মানুষ জজ হতে
চাইবেন? আমাদের থাকার মধ্যে আছে তো শুধু মর্যাদা। তার ওপরেও আক্রমণ হচ্ছে।”
এ বিষয়ে কোনও আইনি রায় না দিয়ে আদালত জানিয়েছে, দায়িত্বশীল হওয়ার ভার
তারা মিডিয়ার উপরেই ছেড়ে দিচ্ছে। বেঞ্চ এই আশাও প্রকাশ করে যে মিডিয়া
নিশ্চিত করবে যে এই ধরনের “ভিত্তিহীন” অভিযোগের জেরে যেন বিচারব্যবস্থার
স্বাধীনতা খর্ব না হয়। বেঞ্চের বক্তব্য, “বিষয়টি পর্যালোচনা করার পর, আমরা
এই মুহূর্তে কোনও আইনানুগ নির্দেশ জারি করছি না। আমরা চাইব মিডিয়া
শুভবুদ্ধি প্রয়োগ করে সংযম দেখাক, এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করুক
এটা নিশ্চিত করতে, যে কী প্রকাশ করা উচিত বা উচিত নয়। অনিয়ন্ত্রিত
এবং মানহানিকর অভিযোগ সমগ্র বিচারব্যবস্থাকে ছোট করে, এবং তার সুনাম ও
স্বাধীনতা খর্ব করে। কাজেই এই মুহূর্তে আমরা মিডিয়াকেই দায়িত্ব দেব
অবাঞ্ছিত বিষয় লোকচক্ষুর সামনে থেকে সরিয়ে রাখার।”
ওদিকে সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ সম্পাদকের দফতর থেকে জানানো হয়েছে যে
“চারটি মিডিয়া সংস্থা – লিফলেট, দ্য ওয়ায়ার, ক্যরাভান এবং স্ক্রোল.ইন-এর
পক্ষ থেকে ইমেইল আসে, এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে উত্তরের আবেদন করা হয়”। জবাবে
আদালতের তরফ থেকে সমস্ত অভিযোগ “অস্বীকার” করে বলা হয়, সেগুলি “সম্পূর্ণ
ভিত্তিহীন এবং কুৎসিত”। প্রধান বিচারপতি নিজেও বলেন, “চারটি অনলাইন
প্রকাশনার তরফে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় – ক্যারাভান, লিফলেট, স্ক্রোল
এবং ওয়ায়ার। তারা অভিযোগের বিরুদ্ধে আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। জবাব
দেওয়ার জন্য আমাকে ১২ ঘন্টাও সময় দেওয়া হয় নি। সেক্রেটারি জেনারেলের তরফে
অভিযোগ অস্বীকার করে জবাব দেওয়া হয়।”