
আবারও প্রাচীর তুলে মাসুদ আজহারকে আড়াল করে কার্যত পাকিস্তানের পাশেই
দাঁড়াল চিন। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিশ্ব সন্ত্রাসী হিসেবে জৈশ
প্রধানের নাম ঘোষণা আবারও চিনের বাধায় ভেস্তে গেল। এ নিয়ে গত ১০ বছরে
চারবার মাসুদ আজহার ইস্যুতে পথের কাঁটা হয়ে রইল ড্রাগনের দেশ। বুধবার
আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসী ঘোষণায় ‘টেকনিক্যাল সমস্যা’ রয়েছে, এই যুক্তি
দেখিয়ে বেঁকে বসে চিন। প্রতিবেশী দেশের এহেন অবস্থান ‘হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা
করেছে নয়া দিল্লি।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি
হামলা হয়। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে জৈশ-এ-মহম্মদ। এ হামলার পরই
আন্তর্জাতিক মহলে মাসুদ আজহারকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করাতে
উঠেপড়ে লাগে নয়া দিল্লি। আজহার ইস্যুতে ভারতের পাশে দাঁড়ায় আমেরিকা,
ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো দেশগুলি। কিন্তু আশঙ্কা ছিল, এ ইস্যুতে আবারও বাধা
হিসেবে দাঁড়াতে পারে চিন। বুধবার সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। চিনের সিদ্ধান্তে
নয়া দিল্লি “হতাশ” হলেও, আগামী দিনে এ ইস্যুতে ভারত যে সোচ্চার হবে, সেকথা
স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে
বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, এক সদস্যের বাধার কারণে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা
পরিষদের আইএসআইএল ও আলকায়দা নিষেধাজ্ঞা কমিটিতে (১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটি)
মাসুদ আজহারের নাম অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া গেল না। এ
সিদ্ধান্তে ভারত “হতাশ”।
মাসুদ আজহার ইস্যুতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘‘পাক
প্রধানমন্ত্রী যদি এতটাই উদার হন, তাহলে আমাদের হাতে তুলে দিক মাসুদ
আজহারকে।’’
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ছাড়াও পোল্যান্ড,
বেলজিয়াম, ইতালি, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভূটান, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো
দেশগুলিও এ ইস্যুতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই
রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী সদস্য নয়। পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে নয়া
দিল্লি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি পাঠানকোট হামলার ঘটনায় জৈশের
দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলে ভারত। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রসংঘের
নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ কমিটিতে আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণার
জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয় ভারতের তরফ থেকে। সে সময়ও টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে
ঢুকে পড়ে চিন। পাকিস্তানের পক্ষ নেয় তারা। এ ঘটনা ঘটে দু’বার, ২০১৬ সালের
মার্চ ও অক্টোবর মাসে। সে বছরের ডিসেম্বর মাসে চিন এ নিয়ে ভেটো প্রয়োগ করে।
২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স এ নিয়ে ফের একটি
প্রস্তাব পাঠায় রাষ্ট্রসংঘে। তখনও বাধা হিসেবে দাঁড়ায় চিন। ২০০৯ সালেও এ
ইস্যুতে আপত্তি জানিয়েছিল বেজিং।