
বিমানবাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের মুক্তি সাউথ ব্লকের কাছে খুবই
গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে এ
ঘটনা অতীব সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তবে এর পিছনে কিন্তু বেশ বড় পরিমাণ
কূটনীতি রয়েছে।
বুধবার ইসলামাবাদের তরফে বিশ্বের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে
যোগাযোগ করা হয়। তার মধ্যে ছিল পি-৫-ও। বলা হয়, ভারত ত্রিস্তরীয় আক্রমণের
পরিকল্পনা করছে- করাচির দিকে নৌবাহিনীর জাহাজ এগিয়ে আনা হচ্ছে, করাচিতে
ব্যালিস্টিক মিসাইল হানার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং ইন্দো-পাক সীমান্তে
বাহিনী জড়ো করা হচ্ছে।
সাড়া পড়ে যায় বিভিন্ন দেশে। সরকারি তরফে
যোগাযোগ করা হয় নয়া দিল্লির সঙ্গে। ভারতের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এসবই
ভুয়ো। বলা হয়, ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ করাচি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যে সব
দেশ আকাশপথে নজরদারি করতে সক্ষম, তারা পাকিস্তানের অভিযোগ কতটা সত্যি, তা
নিজেই দেখে নিতে পারে, বলে দেয় দিল্লি।
ভারতের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়,
তারা কোনও রকম সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি চাইছে না। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে
ভারতের তরফ থেকে অসামরিক আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে
জানায় ভারত। একই সঙ্গে জানানো হয়, পাকিস্তানই ভারতের সামরিক অধিষ্ঠানে
হামলা চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের বলা হয় যে ২০টি পাক বিমান নিয়ন্ত্রণরেখা
পেরিয়ে ভারতীয় সামরিক অধিষ্ঠানের দিকে এগিয়ে আসে। তারা লেজার চালিত বোমা
হামলা করে, যার ফলে একটুর জন্য ভারতীয় সামরিক টার্গেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
দিল্লি এ ঘটনাকে আগ্রাসী পদক্ষেপ বলে মনে করে। সরকারের তরফ থেকে
পাকিস্তানকে বুধবার তা জানিয়েও দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জানানো হয়, পাক
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং পাক সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর
ভারতের দুটি বিমান সে দেশে নামানো এবং দুই পাইলটের পাক সেনার হাতে ধরা
পড়ার যে দাবি করছেন, তা অসত্য। দিল্লির তরফ থেকে বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের
বলা হয়, হয় ইমরান খানকে সত্যি কথা জানানো হয়নি, অথবা তিনি মিথ্যে কথা
বলছেন। এর মধ্যে যেটাই ঠিক হোক না কেন, বিষয়টি অস্বস্তিকর।
ভারতের তরফ থেকে জানানো হয়নি যে তাদের পাল্টা হামলার পরিকল্পনা রূপায়ণ
করতে গিয়েই একটি মিগ ২১ বিমানে মিসাইল হামলা এবং এক ভারতীয় অফিসারের পাক
সেনার হাতে ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে কিনা। ভারত বল ঠেলে দেয় পাকিস্তানের
কোর্টে এবং জানিয়ে দেওয়া হয় উত্তেজনা প্রশমনের দায়িত্ব ইসলামাবাদেরই।
মার্কিন
সচিব মাইক পম্পেও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে
বুধবার কথা বলেন। এর কয়েকদিন আগেই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সীমানা
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেন এবং সমস্তরকম
সহায়তার আশ্বাস দেন। নয়া দিল্লি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের জানিয়ে দেয়,তাদের
উদ্দেশ্য খুবই সীমিত ছিল- জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা, এবং সে উদ্দেশ্য সফলও
হয়েছে।
দিল্লির তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও রকম ডিল বা বোঝাপড়ার মধ্যে
তারা নেই। তবে অভিনন্দনকে নিরাপদে ফিরিয়ে না দিলে তার ফল ভুগতে হতে পারে।
অন্যদিকে পাকিস্তানও একা হয়ে যেতে থাকে। পি-৫ দেশগুলির কেউই তো
পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ায়ইনি, বরং কেউ কেউ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে
পাকিস্তানকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছিল। এমনকি ওআইসি-তে ভারতের আমন্ত্রণ
খারিজ করার পাক দাবিকে উড়িয়ে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সৌদি আরব, এবং সংযুক্ত আরব
আমিরশাহী এ অবস্থান নেওয়ায় ইসলামাবাদের সামনে উপায়ান্তর ছিল না। দেশের
জনগণের সামনে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতীয় বিমান নামানো এবং ভারতীয়
পাইলটকে বন্দি করার ঘটনাকে বালাকোট হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেখাতে পারেন।
পাইলটের মুক্তিদান পাক সেনাবাহিনীর কাছে তাদের পেশাদার মুখ বিশ্বের সামনে
তুললে ধরার একটা সুযোগও বটে।
সন্ধের মধ্যে ভারতের তিন সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে তাদের সম্পূর্ণ
প্রস্তুত অবস্থানের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তারা জানিয়ে দেয়, ফের
হামলা না হলে তারা আর অগ্রসর হবে না। ভারতের সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে এই
বার্তার শুধু পাকিস্তানই নয়, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আন্তর্জাতিক মহলও।