
সময়টা ভালো যাচ্ছে না সিবিআইয়ের সদ্য প্রাক্তন অন্তর্বর্তীকালীন
ডিরেক্টর এম নাগেশ্বর রাওয়ের। একদিকে বিগত শুক্রবার রাতে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে
যুক্ত সংস্থায় কলকাতা পুলিশের হানা,
অন্যদিকে বিগত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের তীব্র সমালোচনা এবং আদালত অবমাননার
অভিযোগ, যার মূলে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে রাওয়ের
নির্দেশে মুজফফরপুর শেল্টার হোম কেলেঙ্কারির
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিবিআই অফিসারের বদলি। এর জেরে রাওকে ১২ ফেব্রুয়ারি
সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি দীপক গুপ্তা ও সঞ্জীব খান্নার
একটি বেঞ্চ মন্তব্য করে যে রাও এবং সিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রসিকিউশনের
ডিরেক্টর এস বাসুরন, যিনি যুগ্ম ডিরেক্টর এ কে শর্মার বদলির ব্যাপারে
“মতামত” দিয়েছিলেন, দুজনেই “আদালতের অবমাননা করেছেন”।
মামলা সংক্রান্ত বিচার প্রক্রিয়া পাটনা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে
যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে ওই বেঞ্চ বলে, পকসো (Protection of Children from
Sexual Offences) আইন ২০১২-র অন্তর্গত মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাকেতের
বিশেষ আদালত যেন এই প্রক্রিয়া আগামী ছমাসের মধ্যে শেষ করে।
বিহার
সরকারেরও কড়া সমালোচনা করে বেঞ্চ বলে, “আপনাদের আধিকারিকরা এই হতভাগ্য
শিশুদের সঙ্গে যে আচরণ করছেন, তা আপনারা অনুমোদন করতে পারেন না।”
এর আগে ‘আদালত বন্ধু’ বা অ্যামিকাস কিউরি অপর্ণা ভট আদালতকে জানান,
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তদন্তকারী দল থেকে শর্মাকে সরিয়ে
দেওয়া হয়েছে। শোনামাত্রই দুপুর দুটোর মধ্যে এই বিষয়ে “যোগ্য
কর্তৃপক্ষের” কাছ থেকে এফিডেভিট তলব করেন বিচারপতি গগৈ। মধ্যাহ্নভোজের পর
বেঞ্চ এফিডেভিট পরীক্ষা করে সিবিআইয়ের কৌঁসুলিকে বলে, “আমরা অত্যন্ত
গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে দেখছি। আপনারা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ নিয়ে খেলছেন।
ঈশ্বর আপনাদের রক্ষা করুন…কখনো, কখনোই, কোর্টের আদেশ নিয়ে খেলবেন না।”
এর পর বেঞ্চের জিজ্ঞাস্য ছিল, এফিডেভিট কে জমা করেছেন, যার জবাবে আদালতে
উপস্থিত সিবিআইয়ের এসপি জানান, তিনিই জমা দিয়েছেন। কার নির্দেশে
দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি রাওয়ের নাম করেন। এই উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করে
আদালত বলে, ওই আধিকারিক এফিডেভিট জমা করবার যোগ্য কর্তৃপক্ষ নন। সরাসরি
তাঁকে উদ্দেশ করে বিচারপতি গগৈ বলেন, “কোনোদিন নিজের ব্যক্তিগত এক্তিয়ারের
বাইরে গিয়ে এফিডেভিট জমা করবেন না। মনে রাখবেন, আপনি একমাত্র আইনের
সেবাতেই নিযুক্ত…”
গত বছরের ৩১ অক্টোবর এবং ২৮ নভেম্বর জারি করা
আদেশের প্রসঙ্গ তুলে আদালত মনে করিয়ে দেয়, শর্মা তদন্তের দায়িত্বে
থাকবেন, এমন নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল। ২৮ নভেম্বরের নির্দেশে এও বলা হয় যে
এই তদন্তের সঙ্গে জড়িত কোনো অফিসারকে আদালতের অনুমতি ছাড়া বদলি করা যাবে
না। বেঞ্চ মন্তব্য করে যে তা সত্ত্বেও ১৯ জানুয়ারি শর্মাকে সিআরপিএফ-এর
অতিরিক্ত ডিরেক্টর নিযুক্ত করে বদলি করার আগে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়
নি।
বেঞ্চের এও অভিমত যে “আদালতের মনে হয় না” ক্যাবিনেটের অধীনস্থ নিয়োগ
কমিটিকে সিবিআই অফিসারদের বদলি সংক্রান্ত কোর্টের নির্দেশ সম্পর্কে জানানো
হয়েছে। শীর্ষ আদালত সিবিআইয়ের বর্তমান ডিরেক্টর ঋষি কুমার শুক্লাকে আদেশ
দেয়, তিনি যেন ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরীক্ষা করে জানান, সংস্থার আর কোন
আধিকারিক শর্মার বদলির সঙ্গে জড়িত।
বিহার সরকারের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে ২০১৮ সালে রাজ্যের ১৭টি শেল্টার
হোমে শিশুদের যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্ত রাজ্যের হাত থেকে নিয়ে
সিবিআইয়ের হাতে অর্পণ করে সুপ্রিম কোর্ট। কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন এই
মামলায় ১৭ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে
বৃহস্পতিবার আদালতে জানায় সিবিআই।