
দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার অবন্তীপোরা এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপরে ভয়াবহ আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) অন্তত ৪০ জন জওয়ানের, যে সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা। আহতের সংখ্যা অন্তত ৪০ ছাড়িয়েছে।
এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে জঙ্গী গোষ্ঠী জইশ-এ-মহম্মদ। এদিনের জঙ্গি হামলার নিন্দা জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, “হামলার কড়া জবাব দেব আমরা।”


“হ্যাঁ, সিআরপিএফ কনভয়ের ওপরে হামলা হয়েছে,” মিডিয়াকে জানান
সিআরপিএফ-এর ইন্সপেক্টর জেনারেল জুলফিকর হাসান। “আমরা এখনও বোঝার চেষ্টা
করছি ঠিক কী হয়েছে।” সিআরপিএফ মৃতের সংখ্যা নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও,
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে যে অন্তত ৩৭ জন সিআরপিএফ জওয়ান এই ঘটনায় প্রাণ
হারিয়েছেন। আধা সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, “৩৫ ও ১৭৯
ব্যাটালিয়নের কাছ থেকে গ্রেনেড ছোড়া এবং গুলি চলানোর খবরও আসছে। তবে এ
বিষয়ে বিশদে এখনই জানানো যাবে না।”
বৃহস্পতিবার দুপুর ৩.১৫ নাগাদ
শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কের ওপর লেতপোরা অবন্তীপোরার কাছে সিআরপিএফ-এর
কনভয়ের ওপর আঘাত হানে হামলাকারীরা। প্রাথমিকভাবে সিআরপিএফ জানায়, আইইডি
ব্যবহার করেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, কিন্তু পুলিশ সূত্রের
খবর, সিআরপিএফ-এর ৫৪ ব্যাটালিয়নের ওই বাসে ইচ্ছে করেই ধাক্কা মারে এক
সুইসাইড বম্বার। স্থানীয় একটি সংবাদ সংস্থায় জইশ-এ-মহম্মদের তরফে ফোন করে
জানানো হয়, তাদের গোষ্ঠীর এক ‘ফিদায়ীন’ (আত্মঘাতী হত্যাকারী) বিস্ফোরক
বোঝাই গাড়িটি চালাচ্ছিল। জইশ জানিয়েছে, ওই বম্বারের নাম আদিল আহমেদ,
পুলওয়ামার গুন্ডি বাগের বাসিন্দা সে। সূত্রের খবর, জইশের পক্ষ থেকে এই
হত্যাকারীর ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
![]() |
সম্ভাব্য আত্মঘাতী হামলাকারী আদিল আহমেদ। জয়েশ-এ-মহম্মদের তরফে প্রকাশিত ছবি |
অন্যদিকে, মারাত্মক এই হামলা নিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জম্মু কাশ্মীরের
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল
গান্ধী। টুইটারে ওমর তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন, এই ঘটনা তাঁকে কাশ্মীর
সমস্যার অন্ধকারতম দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
জম্মু কাশ্মীরের
রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জম্মু
কাশ্মীরে বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী তাদের উপস্থিতি জানান দিতে মরিয়া হয়ে
উঠেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই হামলার পিছনে সীমান্তের ওপারের হাত
রয়েছে, যেহেতু জয়েশ-ই-মহম্মদ এর দায় স্বীকার করেছে।” তিনি জানিয়েছেন, “এই
ধরনের আক্রমণের দ্বারা আমাদের সুরক্ষা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের মনোবল
নষ্ট করা যাবে না, এবং আমরা এই দুষ্ট শক্তির বিনাশ নিশ্চিত করতে
বদ্ধপরিকর।”
উল্লেখ্য, বুধবার এই পুলওয়ামারই এক স্কুলে বিস্ফোরণের ঘটনায় চাঞ্চল্য
ছড়ায়। বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৫ জন পড়ুয়া জখম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জখম
পড়ুয়াদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকজনকে শ্রীনগর হাসপাতালেও
পাঠানো হয়। বিস্ফোরকের স্প্লিন্টারে অনেকে জখম হন বলে জানা গিয়েছে। ওই দিন
দুপুর আড়াইট নাগাদ বিস্ফোরণটি ঘটে। স্কুল চলাকালীনই বিস্ফোরণটি ঘটেছিল।
এরও আগে মধ্য কাশ্মীরের বদগাম জেলায় সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াইয়ে নতুন করে
অশান্তি ছড়ায়। এনকাউন্টারে দুই জঙ্গি নিহত হয় বলে জানা গিয়েছিল। বুধবার
ভোরে বদগাম জেলার গোপালপোরা এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির
লড়াই চলে বলে জানা গিয়েছে।