
বিক্ষোভ-অশান্তি বন্ধ করতে অবশেষে পিছু হঠল অরুণাচল সরকার। যে স্থায়ী
বাসিন্দা শংসাপত্র বা পিআরসি দেওয়া নিয়ে গত কয়েকদিনে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি
তৈরি হয়েছে সে রাজ্যে, সেই পিআরসি নিয়ে আপাতত পদক্ষেপ নেবে না সরকার,
সোমবার একথাই জানালেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু। একইসঙ্গে
বিক্ষোভ কর্মসূচি বন্ধ করার আর্জিও রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনওরকম ধর্না
কর্মসূচি না করে বিক্ষোভকারীরা যাতে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেন, সে
অনুরোধও করেছেন পেমা।
উল্লেখ্য, রাজ্যের ছটি উপজাতি গোষ্ঠীকে স্থায়ী বাসিন্দা শংসাপত্র দেওয়া
নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে অরুণাচল প্রদেশ। বিক্ষোভ-অশান্তিতে রবিবার
পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের গুলিতে ওই দুজনের
মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অশান্তির ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও অনেকে।
এদিন
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “২২ ফেব্রুয়ারি রাতে
সংবাদ মাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় স্পষ্ট করে জানিয়েছি, সরকার এ নিয়ে কোনও
আলোচনা চালাবে না আর। আজ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে,
আমরা পিআরসি ইস্যু নিয়ে আপাতত পদক্ষেপ নিচ্ছি না।” অন্যদিকে রাজ্যে হিংসার
ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য কমিশনার
পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পেমা।
বিক্ষোভকারীদের
উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “২২ ফেব্রুয়ারি সরকার তাঁদের সব দাবি মেনে
নিয়েছে। পিআরসি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনওরকম বিক্ষোভ-ধর্না না করে
সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।” কারও “প্ররোচনাতেই” সে রাজ্যে অশান্তির
পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পেমা। এ প্রসঙ্গে অরুণাচলের
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই গোটা ঘটনার পিছনে কারও হাত রয়েছে। তার কারণ অরুণাচল
এমনিতে খুবই শান্ত রাজ্য।”
প্রসঙ্গত, ইটানগরে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন অভিযানে যাওয়ার সময়
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে
পাথর ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামলাতে
শেষমেশ গুলি চালায় পুলিশ।
শনিবার ইটানগর এবং নাহারলাগুনে
বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের ঘায়ে জখম হন ২৪ জন পুলিশকর্মী-সহ ৩৫ জন। এরপরই
এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফু জারি করা হয়। রবিবার রাজ্যের
উপ-মুখ্যমন্ত্রী চাউনা মেইনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।
পাশাপাশি ইটানগরের ডেপুটি কমিশনারের দফতরেও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে
রবিবার রাতের দিকে এক হাজার আধা সামারিক জওয়ানকে অরুণাচলে মোতায়েন করা
হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার পুলিশের গুলিতে জখম হন এক ব্যক্তি। পরে তাঁর
মৃত্যু হয়। এ ঘটনাকে ঘিরে আরও তেতে ওঠে অরুণাচল। রবিবার ওই ব্যক্তির
শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এক
আধিকারিক জানিয়েছেন, “ইটানগরে বহু বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিলেন। রাস্তা অবরোধ
করা হয়েছিল। গাড়ি গেলেই ভাঙচুর করা হচ্ছিল।”
অশান্তির জেরে এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। রবিবারও
ইটানগরে কোনও দোকানপাট খোলেনি। অধিকাংশ এটিএমেই টাকা নেই। গোটা পরিস্থিতির
উপর নজর রাখছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। রাজ্যপালের সঙ্গে রাজনাথ সিং
নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলেও খবর। অন্যদিকে, রাজ্যের বিজেপি সরকারের
অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের
দাবি জানিয়েছে তারা।